মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পথচারীর ফুটপাত দখলে, শহর যেন বাজার

ফুটপাতে গড়ে ওঠা দোকানপাট। ছবি : কালবেলা
ফুটপাতে গড়ে ওঠা দোকানপাট। ছবি : কালবেলা

মুন্সীগঞ্জ শহর হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার ধলেশ্বরী নদীর পাড় থেকে দেওভোগ এলাকার জেলা পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরটির প্রায় ১ কিলোমিটার ফুটপাত ও সড়কের বিভিন্ন অংশে রয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর সবজির দোকান, ফলের দোকান ও স্ট্রিট ফুডের দোকান। আবার কোথাও কোথাও অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখলে। দেখলে মনে হয় পুরো শহর একপ্রকার হাটবাজারে পরিণত হয়েছে।

শহরটির প্রধান দুটি সড়ক সদর থানা (পুরাতন) সড়ক ও অপরটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক (নতুন)। তবে এসব সড়কের উভয়পাশে পথচারীর জন্য ফুটপাত থাকলেও তা দখলে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সড়কে চলাচল করতে গেলে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন সড়কের সম্পূর্ণ ফুটপাত বিভিন্ন হকারদের দখলে রয়েছে। আবার যাদের সড়কের পাশে স্থায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা ফুটপাত দিয়ে মানুষের হাঁটার জন্য তিল পরিমাণ জায়গা খালি রাখেনি। বিভিন্ন পণ্য দিয়ে ফুটপাত দখলে রেখেছেন তারা। রাস্তার দুই পাশে অবাধে বসা ভাসমান দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

শহরে বিভিন্ন সড়ক যেমন, সুপার মার্কেট মোড়, শিল্পকলা চত্বর, খালইস্ট মোড়, মুন্সীরহাট বাজার, কোর্টকাচারি চত্বর, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন সড়ক দখল করে অটোরিকশা গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, বিভিন্ন সেক্টরে উৎকোচ দেওয়ার পাশাপাশি নেতাদের ক্ষমতার দাপটে বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ দখলদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, পোস্ট অফিসের সামনে আমার একটি চৌকি আছে। যেখানে বসে বাচ্চাদের জামাকাপড় বিক্রি করি। পোস্ট অফিস থেকে কাচারি চত্বর পর্যন্ত এসব দোকান রয়েছে। প্রতিমাসে এসব দোকান থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নিয়ে থাকে বাজার কমিটি, রাজনৈতিক নেতারা।

সবজি বিক্রেতা মো. শহীদ বলেন, মাতৃসদন-সুপার মার্কেট এলাকায় আমরা ৫০/৬০ জন ব্যবসায়ী আছি। পৌরসভা থেকে শহর বাজারের ডাক নিয়েছে যারা তারা আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে নিয়ে থাকে। আমদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মাসিকও দিয়ে থাকে।

মুন্সীগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক এডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ শহরটির পরিসর খুবই ছোট। শহরের এ ছোট গণ্ডির ভেতরে প্রধান সড়কের ফুটপাত দখল করেছে ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা পরিচালনা করায় সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে শহরের নান্দনিকতাও বিনষ্ট হচ্ছে। শহরের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ও নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে ফুটপাট দখলমুক্ত করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী একটি নির্ধারিত নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, পৌর শহরে যানজট নিরসনে অটোরিকশা পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া উচিত। আর কে বা কারা এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। দিনদিন এ অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। যা পরবর্তী উচ্ছেদ করা কর্তৃপক্ষের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। তবে এসব বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেক নাজুক।

ট্রাফিক পুলিশের টিআই (সদর) মুহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, আমরা সড়কে যানজট নিরসনে ভ্রাম্যমাণ গাড়িগুলো না বসার জন্য সব সময় বলে থাকি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। ভ্যানে করা পণ্য যারা বিক্রি করে তাদের মালামাল ফেরত দিয়ে ২/৪ দিন ভ্যানটি আটকে রাখি। পরে জরিমানা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে আবারও তারা সড়কে এসে বসে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে পালনে চেষ্টা করি। অফিসের সময় বিভিন্ন ট্রাক বা ভটভটি শহরের মাঝখান দিয়ে চলাচলে নিষেধ রয়েছে। পাশাপাশি ভ্যানে করে বেচাবিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে। অটোরিকশা তুলনামূলক বেশি থাকার কারণে মাঝে মাঝে সুপার মার্কেট চত্ত্বর, শিল্পকলা ও কাচারি চত্ত্বরে মেইন্টেইন করতে সমস্যা হয়।

পৌরসভার মেয়র চৌধুরী ফারিয়া আফরিন বলেন, আমাদের পৌরসভাকে স্মার্ট পৌরসভা গড়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। অবৈধ ফুটপাত দখল, যত্রতত্র ভাসমান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অবৈধ স্ট্যান্ড ও যানজট নিরসন করা হবে। ইতোমধ্যে পৌরসভা থেকে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে দোকান কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্ব-স্ব ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে পৌরসভার পরিছন্নকর্মীদের কাছে দিয়ে দেওয়ার জন্য। না মানলে জরিমানার বিধান রয়েছে। তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের নিজস্ব লোকও আছে।

তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন হকার কিংবা ভাসমান ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে। এতে যানজট অনেকটাই নিরসন হবে। ফুটপাত দিয়ে সহসাই মানুষ চলাচল করতে পারবে।

মেয়র আরও বলেন, পৌরসভার মানুষ আমাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছে সেটা যথাযথ রক্ষায় আমি এগিয়ে যাচ্ছি। সবেমাত্র কয়েকদিন হলো আমি মেয়র হয়েছি। এগুলো আমার পরিকল্পনায় রয়েছে, ধাপে ধাপে কাজগুলো দৃশ্যমান হবে। কোনো ভ্রাম্যমাণ দোকান কিংবা সড়কের ওপর কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, পৌরসভার বিষয়গুলো পৌর কর্তৃপক্ষ দেখাশোনা করে। তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা চাইলে আমরা সহায়তা করবো। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সেইসব অবৈধ স্থাপনা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে দেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হঠাৎ অসুস্থ খালেদা জিয়া, নেওয়া হবে হাসপাতালে

গলা পানি পেরিয়েও ত্রাণ পেলেন না তারা

ক্রুসকে ক্ষমা করে দিয়েছেনে পেদ্রি

চিনি ও মোটরসাইকেলের চালান ধরে ফেলল ছাত্রলীগ

বাংলাদেশকে নিয়ে পরিকল্পনা আঁকছেন গিলেস্পি

মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘পিস্তল’সহ আটক দুই

উইম্বলডন ২০২৪ / জোকোভিচ জিতলেন, ইংল্যান্ডকে অভিনন্দনও জানালেন

তাদের শুধু চাই হালুয়া-রুটি আর মসনদ : কর্নেল অলি

দুবাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বাংলাদেশি নিহত

মায়ের কবরের পাশে গাছে ঝুলছিল ছেলের মরদেহ

১০

কাউন্সিলর আতিকুরের চারটি বাড়ি জব্দের আদেশ

১১

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শে নিহত হওয়ার ঘটনায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর শোক

১২

১৮ জুলাই বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড সীফুড শো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

১৩

মাউশিতে একসঙ্গে ২৮ জনের সংযুক্তি বাতিল

১৪

বিল সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা 

১৫

আ.লীগ গণতন্ত্রকে লাশ বানিয়ে ফেলেছে : রিজভী

১৬

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

১৭

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শে নিহত বেড়ে ৬

১৮

যাত্রী সেজে অটোরিকশা চুরি, গ্রেপ্তার ২

১৯

রংপুরে বাড়ছে তিস্তার পানি, পানিবন্দি পাঁচ শতাধিক পরিবার

২০
X