দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ছে তিস্তায়। সকাল-দুপুর এমন পানি ওঠানামার খবরে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ির আঙিনা-উঠান, এমনকী ভাতের চুলার মধ্যেও বানের পানি ঢুকে পড়েছে। বসতবাড়ির ভিতরে পানি ঢুকে ভাসিয়ে নিয়েছে হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, আসবাবপত্র ও গবাদিপশুর খাবারও।
সোমবার (০১ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
অন্যদিকে, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার দুপুরে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৮৯০ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণে রংপুর লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে নিম্নাঞ্চলের ঘর বাড়িতে ফের উঠতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজি ক্ষেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধি ও কম ভাঙনের কবলে পড়েছে কাউনিয়ার গদাই গ্রাম। গত দেড় সপ্তাহে চলাচলের রাস্তার প্রায় ২০০ কিলোমিটার ভেঙে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে ভাঙতে পারে সেখানকার অন্তত ১০টি বাড়ি।
গদাই গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কাছে চলে আসছে নদী। কতবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছি, বলেছি কোনো কাজই করেনি।
একই কথা বলেন আসমা বেগম নামে এক গৃহিণী। তিন বলেন, আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নাই। ঠিকমতো জিও ব্যাগ না ফেলায় যে কোনো সময়ে বাড়ি ভেঙে যাবে, সেজন্য আগেভাগেই অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি একটা ঘর। কেননা, বানের পানিতে উঠান, চুলা ডুবে গেছে। ঘরের মধ্যে পানি উঠে থালা-বাসন ও আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তাই ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গংগাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদ্রাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেখানে নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, তিস্তা নদী এলাকায় পানি বৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে, প্রস্তুত রয়েছে শুকনো খাবারও।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের আট জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের খবর আসছে। গত সপ্তাহে আমাদের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এসেছেন। খোঁজখবর রাখছেন তিনি। বরাদ্দ এলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বরাদ্দ নেই, আপদকালীন বরাদ্দ যা আছে তা দিয়ে সাময়িকভাবে কাজ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন