রাতভর ভারি বৃষ্টিপাত, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জ শহর সহনিম্নাঞ্চলে। বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, পাটলাই, যাদুকাটাসহ সব নদ-নদীর পানি। প্রথম দফার বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই ফের বন্যার কবলে পড়ছেন সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।
এরই মধ্যে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে জেলা শহরের সঙ্গে বেশ কয়েকটি উপজেলার। আর এতে আবারও বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছেন ভাটির জেলার লাখ লাখ মানুষ।
সোমবার (১ জুলাই) সকালে ফের ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। এমনকি ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে আবারও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্য নগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আবারও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ৫ লাখেরও বেশি মানুষকে।
এ অবস্থার মধ্যে আগামী তিন দিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে এবং পরের পাঁচদিনও এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে হাওরপাড়ের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের কিছু অংশ আবার তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার মানুষ জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। যাত্রী ও এলাকাবাসীকে চলাচলে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা।
পৌর শহরের জাকির হোসেন বলেন, নদীতে প্রবল স্রোত তার সঙ্গে রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি যেভাবে বাড়ছে আবারও যদি বন্যা হয় মানুষজন আবার ভোগান্তি পোহাতে হবে মনে হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা বাবলু মিয়া বলেন, আবারও বাড়ছে নদীর পানি। এরই মধ্যে তাহিরপুর উপজেলা জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে যেতে- আসতে ভোগান্তি তো আছেই। এ ছাড়াও নৌকা ও সিএনজি ভাড়া অনেক টাকা খরচ হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি এরই মধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমে গেলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমে যাবে। আর এখন যেহেতু পানি বাড়ছে সেক্ষেত্রে জেলায় স্বল্পমেয়াদি একটা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
গত ১৬ জুন সুনামগঞ্জে চলতি বছর প্রথম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সাত উপজেলার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে পাহাড়ি ঢলে ৭২ কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ৩০ কোটি টাকার ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন