আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বংশপরম্পরায় পাওয়া পেশায় লক্ষ্মণের ৫৬ বছর পার

বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি করেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার লক্ষ্মণ চন্দ্র নম। ছবি : ছবি : কালবেলা
বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি করেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার লক্ষ্মণ চন্দ্র নম। ছবি : ছবি : কালবেলা

প্রায় ৫৬ বছর ধরে বংশপরম্পরায় পাওয়া পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার লক্ষ্মণ চন্দ্র নম। বাঁশ-বেত দিয়ে কুলা, চালুন, খাঁচা, চাটাই, গোলা, ওড়া, বাউনি, জুহুন, টুরি, ঝুঁড়ি, ডুলা, টুকরি ইত্যাদি তৈরি করছেন তিনি।

তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামসামগ্রী বাজার দখল করে নেওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এ পেশায় এখন আর আগের মতো জৌলুস নেই। তার সঙ্গের অনেকেই পেশাবদল করলেও বাপ-দাদার সম্মান ধরে রাখতে এই আদি পেশাকেই এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি।

এক সময় লক্ষ্মণ চন্দ্র নম’র বাবা শ্রীধাম চন্দ্র নম ছিলেন এই পেশার কারিগর। তার কাছ থেকে হাতেখড়ি নিয়ে কিশোর বয়স থেকেই লক্ষ্মণ চন্দ্র নিযুক্ত হন এ পেশায়। দীর্ঘ সময়ের চড়াই-উতরাই পার করে আজও এ পেশায় নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন তিনি।

লক্ষ্মণ চন্দ্র নম’র বয়স ৭২ বছর পেরিয়েছে। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার মৃত শ্রীধাম চন্দ্র নম’র বড় ছেলে। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। এরপরও বাঁশ বেত দিয়ে নানারকম পণ্য তৈরি করছেন তিনি।

৩০ জুন বিকেলের দিকে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির। কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি চোখে যতটুকু দেখছেন তাতেই দা দিয়ে বাঁশ থেকে তুলে যাচ্ছেন বেত। লক্ষ্মণ চন্দ্র নম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার বাবার আগে আমার দাদা বাঁশ বেতের কাজ করতেন। তারপর দাদার হাত ধরে আমার বাবা এই পেশায় আসেন। আমিও আমার বাবার হাত ধরে এই পেশায় এসেছি। তবে সময় অনেক বদলে গেছে, আমার কোনো ছেলে এই পেশায় আসেনি। তারা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। আমিও তাদের জোর করিনি, কারণ, এখন আগের মতো বাঁশ বেতের তৈরি পণ্যের তেমন একটা চাহিদা নেই। আমি বাপ-দাদার আদি পেশার সম্মান ধরে রাখতেই দীর্ঘ ৫৬ বছর যাবত এই পেশায় জড়িয়ে আছি।

আগে বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি পণ্যের কদর কেমন ছিল- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছোটবেলায়ও দেখেছি পণ্যের চাহিদা মেটাতে বাপ-দাদারা দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজ করতেন। পাইকাররা বাড়িতে এসে এসব পণ্য কিনে নিয়ে যেতেন। গত তিন দশক আগেও এই পণ্যের চাহিদা ভালোই ছিল। তবে বাজারে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দিন দিন বাঁশ বেতের পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। তবে শুনছি এ সময়েও বাঁশ বেতে তৈরি পণ্যের চাহিদা দেশের বাইরে বেশ ভালো রয়েছে। কিন্তু আমাদের তো এ রকম পুঁজি বা আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই।

স্মৃতি হাতড়ে লক্ষ্মণ চন্দ্র নম বলেন, সময় খুব দ্রুত চলে যায়। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন, বাবার সঙ্গে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাঁশ কিনতে যেতাম। এসব বাঁশ থেকে দা দিয়ে বেত সংগ্রহ করে সাংসারিক কাজে ব্যবহারের জন্য নানারকম পণ্য তৈরি করতাম। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এসব পণ্য কিনে নিতেন। তখন বিদ্যুৎ ছিল না, কুপির আলোয় রাতেও কাজ করতাম। সেসব সোনালি দিন আর ফিরে আসবে না। বাপ-দাদার হাত থেকে পাওয়া এই পেশায় মন বসে গেছে, আমার পর আমার বংশের কেউ আর এই আদি পেশাকে লালন করবে না, এটা ভাবলেই মন ভেঙে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এস আলম গ্রুপে জব সার্কুলার, কর্মস্থল চট্টগ্রাম

জিপসাম নিয়ে মেঘনায় জাহাজডুবি, নাবিকসহ উদ্ধার ১০

ট্রফি নিয়ে দেশের পথে রোহিতদের বিমান

গ্রিসে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত নাহিদা সুমনা

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান 

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে চিংড়ি পোনা আহরণ

গাজী গ্রুপে নিয়োগ, আবদেন করুন শুধু পুরুষরা

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহারা

মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ধারাবাহিক অগ্রগতির চিত্র

পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা সরকারের

১০

ফিল্ড অফিসার নেবে এসিআই

১১

সড়ক অবরোধ করে জবি শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন

১২

বন্যায় কুলাউড়ার ৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

১৩

জন্মের আগে রেজিস্ট্রি; দলিলে আছে সরকারি হাট ও খেলার মাঠ

১৪

শিশু কিডনি চিকিৎসক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হলেন অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম

১৫

থানা হাজতে আসামির মৃত্যু, যা মিলল সিসিটিভির ফুটেজে

১৬

বিপৎসীমার ওপরে তিন নদীর পানি

১৭

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা

১৮

ফ্রান্সে অনন্ত-বর্ষাকে সম্মাননা প্রদান

১৯

কলড্রপ নিয়ে জিপিকে শোকজ

২০
X