চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে সে তুলনায় নেই পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা। ফলে সড়কের উভয়পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এখন নিয়মিত দৃশ্য। লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। আর এ যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হয় মূল্যবান কর্মঘণ্টা।
এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে পে-পার্কিং (টাকার বিনিময়ে গাড়ি রাখা) চালু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ পার্কিংয়ে ঘণ্টা প্রতি দুই চাকার গাড়ি ১৫ টাকা এবং তিন ও চার চাকার গাড়িতে দিতে হবে ৩০ টাকা।
তবে আপাতত আগ্রাবাদ এলাকায় ‘ইয়েস পার্কিং’ নামের অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে অর্থের বিনিময়ে গাড়ি রাখতে পারবেন নগরবাসী। যদিও এ পাইলট প্রকল্পের প্রচারণার অংশ হিসেবে আগামী দুই সপ্তাহ গাড়ি রাখলে কোনো চার্জ দিতে হবে না।
পে-পার্কিং ঘিরে রোববার (৩০ জুন) দুপুরে নগরের হোটেল আগ্রাবাদে এক উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি থেকে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পে-পার্কিংয়ের কার্যক্রমটি পরিচালনা করবে বি-ট্র্যাক সলিউশনস লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ইয়েস পার্কিং নামের এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২০০টি গাড়ি রাখার জায়গা থাকবে। তবে শুরুতে আগ্রাবাদের সিলভার স্পুনের সামনে থেকে কমার্স কলেজ পর্যন্ত এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সড়কে মোট ১৭৭টি গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যারা এ ইয়েস পার্কিংয়ে তিন চাকা ও চার চাকার গাড়ি রাখবেন তাদের ঘণ্টাপ্রতি গুনতে হবে মাত্র ৩০ টাকা। এসব গাড়ি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাখতে চাইলে দিতে হবে ২০০ টাকা। আর দুই চাকার গাড়ি অর্থাৎ মোটরসাইকেল বা স্কুটি রাখতে হলে ঘণ্টায় গুনতে হবে ১৫ টাকা। যদি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাখতে হলে দিতে হবে ১০০ টাকা।
ইয়েস পার্কিং মাধ্যমে অনলাইন এবং নগদ টাকা দু’ভাবেই পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া নিতে পারবেন৷ তবে যে সকল চালকদের স্মার্ট ফোন নেই তারা ইয়েস পার্কিংয়ের ৬ জন এজেন্টের মাধ্যমে পার্কিং সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসেব মতে, নগরে প্রতিদিন নতুন করে নিবন্ধিত হচ্ছে শতাধিক যানবাহন। চলছে ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪০ হাজার গাড়ি, সাড়ে তিন হাজার গণপরিবহনসহ কয়েক লাখ রিকশা। তবে নগরীতে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল বা হাসপাতাল-স্কুল মার্কেটভত্তিকি পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নেই বললেই চলে।
বি-ট্র্যাক সলিউশনস লিমিটডের ডেপুটি ম্যানেজার মো. শাহ ফারুক কালবেলাকে বলেন, ইয়েস পার্কিংয়ে তিন চাকা ও চার চাকার গাড়ি রাখবেন তাদের ঘণ্টাপ্রতি গুনতে হবে মাত্র ৩০ টাকা। এসব গাড়ি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাখতে চাইলে দিতে হবে ২০০ টাকা। আর দুই চাকার গাড়ি অর্থাৎ মোটরসাইকেল বা স্কুটি রাখতে হলে ঘণ্টায় গুনতে হবে ১৫ টাকা। যদি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাখতে হলে দিতে হবে ১০০ টাকা।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ বলেন, ঢাকার পর চট্টগ্রামে প্রচুর পরিমাণে যানজট হয়। এ প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে চসিক আরও তিনটি এমন প্রকল্প হাতে নিবে বলে জানিয়েছে। তাই আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি মাল্টিস্টরেট সিস্টেমে যেন পার্কিং করা হয়। ঢাকার মতিঝিলে এমন একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মত করে চট্টগ্রামেও করা গেলে যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, নগরীতে গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা তা পে-পার্কিংয়ের মাধ্যমে লাঘব হবে বলে আশা করি। আধুনিক সিগনাল সিস্টেম চালু হলে যানজট কমবে। মেয়র সাহস করে হকার উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু হকার উচ্ছেদ করার পর দেখা যাচ্ছে আবার রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে হবে।
চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নাগরিক সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল সলিউশন আনার চেষ্টা করছি আমি। এর অংশ হিসেবে যানজট কমাতে আগ্রাবাদে পে-পার্কিং চালু করা হলো। এ পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নগরীতে আরও পে-পার্কিং স্পট চালু করা হবে। ইতোমধ্যে নগরীর ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাতে ৩ ওয়ার্ডে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
‘পে-পার্কিং’ ব্যবস্থার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহাম্মদ, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুস সালাম মাসুম, আতাউল্লাহ চৌধুরী, শাহীন আক্তার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী শাহীন শাহীন- উল -ইসলাম চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন।
চসিকের পক্ষে পে-পার্কিং বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন, বি-ট্র্যাক সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম তানভীর সিদ্দিকী, প্রকল্প প্রধান সাফায়েত আবদুল্লাহ, হেড অব সেলস সিরাজ উদ্দিন, ডেপুটি ম্যানেজার মো. শাহ ফারুক ও সিনিয়র একজিকিউটিভ সরোয়ার হোসেন চৌধুরী একজিকিউটিভ তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন