বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক ‘কালবেলা’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা বলেছেন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ করা হয়েছে সনাতন ধর্মের মানুষের কল্যাণের জন্য। সনাতনী হিন্দু মানেই হলো আদি-অনন্ত। সনাতনী মানেই হলো জ্ঞানী ও বিনয়ী, সনাতনী হলো যত মত, তত পথ।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ জেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক মত থাকতে পারে। আমরা কেউ রামকৃষ্ণ মিশনের শিষ্য, কেউ ইস্কনের ভক্ত, কেউ সৎসঙ্গের শিষ্য কেউবা স্বামী স্বরূপানন্দের বা রামঠাকুরের শিষ্য। আমাদের মধ্যে অনেক মত থাকবে কিন্তু আমরা সবাই সনাতনী।
তিনি বলেন, পূজা পরিষদ কেবল পূজা উদ্যাপনের জন্য করা হয় না, পূজা পরিষদ করা হয় সব মন্দির এবং মন্দিরের সম্পদকে রক্ষা করার জন্য, মা-বোনরা কেউ যাতে ধর্মান্তরিত না হয় সেজন্য পূজা পরিষদ করি। আমাদের কোনো হিন্দু ছেলেমেয়ে যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে, বিনা চিকিৎসায় যেন না মারা যায় সেজন্য পূজা পরিষদ করি। আমরা পদের লোভে পূজা পরিষদ করি না। ১৯৮৪ সাল থেকে নিঃস্বার্থভাবে পূজা পরিষদ করে আজ সেক্রেটারি হয়েছি।
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, পদের লোভ ত্যাগ করে হিন্দুদের কল্যাণে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। যারা দুঃসময়ে সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছে আমরা তেমন নেতৃত্ব চাই। যাদের দৃঢ় নেতৃত্বে মন্দির রক্ষা পাবে, মা-বোনেরা নিরাপদ থাকবে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনার খবর পাই এতে অনেক কষ্ট হয়।
তিনি আরও বলেন, যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু লোক ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হিন্দুধর্ম নিয়ে উপহাস করে, অথচ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। কিন্তু কোথাকার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নাসিরনগরের হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। আমি চারবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি কত কষ্ট, কত বেদনা। এমন ঘটনা যারা রোধ করতে পারবে তারাই নেতৃত্বে আসবে।
তিনি জেলা পর্যায়ের নেতাদের পদের লোভ ত্যাগ করে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে আহ্বান জানান।
এদিকে দীর্ঘ সাত বছর পর বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে জেলার ৯টি উপজেলার পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা আনন্দমিছিল নিয়ে শহরের হালদারপাড়াস্থ শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালিবাড়ি নাটমন্দির চত্বরে সম্মেলনস্থলে সমবেত হন।
এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। পরে শিশু নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শ্রী বাসুদের ধর।
সম্মিলনী সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল চন্দ্র দেবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী অ্যাড. কিশোর কুমার রায় চৌধুরী পিন্টু, কার্যকরী সদস্য ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রী ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মিন্টু ভৌমিক, সুভাষ চন্দ্র পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ নাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিমল রায়, অ্যাড. প্রণব কুমার দাস উত্তম, প্রদ্যুৎ রঞ্জন নাগ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব সঞ্জীব চন্দ্র সাহা বাপ্পী।
পরে বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা আংশিক জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে সভাপতি হন- আদেশ চন্দ্র দেব ও সাধারণ সম্পাদক হন- সুজন দত্ত। এ ছাড়াও সঞ্জীব সাহা বাপ্পী ও খোকন কান্তি আচার্য্যকে সহসভাপতি এবং হরিপদ ভৌমিক দুলাল ও অ্যাড. রঞ্জিত মালাকারকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।
মন্তব্য করুন