লিবিয়ায় রাজশাহীর এক যুবককে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
ভুক্তভোগী ওয়াসিম আলী দুর্গাপুর গোপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের সায়বাড় গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওয়াসিমের চাচাতো ভাই ইসমাইল ও তার পরিবারের নামে রাজশাহীর আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ জুন ওয়াসিমের মামা আব্দুল জলিল এ অভিযোগ দেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওয়াসিম দেড় বছর আগে লিবিয়ায় যান। এরপর তাকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে তার চাচাতো ভাই ইসমাইল। সেই মোতাবেক স্থানীয় হাসপাতালে কাজ বাদ দিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য ইসমাইলের পাঠানো গাড়িতে ওঠেন ওয়াসিম। এর ১৫ দিন পর বাড়িতে খবর আসে, ওয়াসিম মাফিয়াদের হাতে জিম্মি হয়েছেন। তাকে ছাড়াতে ১৪ লাখ টাকা লাগবে। পরে মাফিয়াদের ৮ লাখ টাকা দিলেও তারা তাকে মুক্তি দেয়নি। ইসমাইল আগে থেকেই লিবিয়ায় থাকে।
ওয়াসিমের মা পেমেলা বিবি বলেন, এ ঘটনার আগে ইসমাইল একদিন ফোন করে আমাকে বলে সে ওয়াসিমকে ইতালি পাঠাতে পারবে। সেখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। ইনকামও বেশি। এরপর আমার কাছে কিছু টাকা চায়। কিছুদিন পর জানতে পারি আমার ছেলেকে মাফিয়ারা লিবিয়ায় জিম্মি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ছেলের মুক্তির জন্য তারা ফোনে আমার কাছে ১৪ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। টাকা দিতে না পারায় ছেলের ওপর তারা নির্মম নির্যাতন চালায়। ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমি ঢাকায় হোটেলের কাজ ছেড়ে রাজশাহীর বাড়িতে চলে আসি। তারা বলেছে, টাকা না পাঠালে আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পেমেলা বিবি বলেন, পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেল। আজও ছেলেকে মুক্ত করতে পারিনি। ইসমাইলের বাবা-মায়ের হাত-পা ধরেছি। কোনো কাজ হয়নি। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, ছেলেকে সুস্থভাবে আমার বুকে ফিরিয়ে দিক।
ওয়াসিমের মামা আব্দুল জলিল বলেন, ওয়াসিমকে লিবিয়ার নিয়ে যাওয়ার শুরু থেকে ইসমাইল আছে। তার ভরসায় ওয়াসিম লিবিয়ায় যায়। লিবিয়ায় ওয়াসিম একটা হাসপাতালে কাজ করত। এমন অবস্থায় ইসমাইল বারবার ওয়াসিমকে ফোন করে বলে তোমাকে লিবিয়ায় থাকতে হবে না। তোমাকে ইতালিতে পাঠাব। সেখানে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবা। দীর্ঘদিন ফোন দিয়ে রাজি করে ওয়াসিমকে।
উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, মাফিয়ারা তাদের ওয়াসিমের পরিবারের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান। এরপর ৩ লাখ টাকা পাঠানোর সময় আমি সঙ্গে ছিলাম। পরবর্তীতে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা তা আমি জানি না।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ওয়াসিমকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ায়। এ কারণে থানায় অভিযোগ নেওয়া যায়নি। ওয়াসিমকে মুক্ত করতে পররাষ্ট্র অথবা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুঠিয়া সার্কেল) রাজিবুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পায়নি, লিখিত অভিযোগ পেলে সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন