ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, জাতীয় আর্থিক বছরের সঙ্গে সমন্বিত করে এখন থেকে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সময়কাল হবে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত।
শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এ তথ্য দেন ভূমিমন্ত্রী।
এ সময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম ও ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, অতীতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সময়কাল ছিল প্রতি বছরের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত (বঙ্গাব্দ)। কর আদায়কালের বর্তমান পরিবর্তনটি ভূমি উন্নয়ন করের আদায় প্রক্রিয়াকে অধিকতর সুষম, স্বচ্ছ ও কার্যকর করবে বলে আমরা মনে করি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নতুন পদ্ধতি আমাদের দেশের ভূমি রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা আনবে।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সার্বিক দিকনির্দেশনায় দেশে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমিসংক্রান্ত জনবান্ধবসেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনার স্মার্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ নারী অধিকার নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও, এসব উদ্যোগ দেশের নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। নিজস্ব ভূমি অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন হয়ে উঠবে। এটি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।
ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানান, অনলাইনে জমির মালিকানার তথ্য রয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখের অধিক। ডাক বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকের ঠিকানায় এই পর্যন্ত প্রায় আট লাখের অধিক খতিয়ান পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। বিদেশ থেকে সরাসরি ০৯৬১২৩১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল land.gov.bd অথবা ‘খতিয়ান’ মোবাইল অ্যাপ-এর মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করলে খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপের সত্যায়িত কপি ১৯২টি দেশে নাগরিকের নিজ-নিজ ঠিকানায় প্রেরণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ানের ধারাবাহিক ক্রম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভূমিমন্ত্রী এসময় আরও জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট ভূমিসেবা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো খতিয়ানের দাগ শেয়ার হবে না, ভূমি নিয়ে কোনো মামলা-মোকদ্দমা থাকবে না, সীমানা বিরোধ হবে প্রায় শূন্য, নাগরিকগণকে খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না। এনআইডি দিয়েই পাওয়া যাবে একজন নাগরিকের জমির সকল তথ্য। আর জমি ক্রয়ের সঙ্গে-সঙ্গেই পাওয়া যাবে সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ বা সিএলও। যেসব জায়গায় একবার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হবে, সেখানে ভবিষ্যতে আর জরিপ করার প্রয়োজন পড়বে না।
ভূমি সচিব জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করেছে এবং নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সহজতর করবে এবং জনগণকে দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে জমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানে সহায়তা করবে। নতুন জনবল নিয়োগের ফলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ‘ভূমি আমার ঠিকানা, স্মার্ট ভূমিসেবা স্মার্ট নাগরিক’ ‘ঢাকা জেলার খাসজমি চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম’, ‘ঢাকা জেলার জলমহাল সমগ্র’- এই তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ভূমিমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থার গণকর্মচারী, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। তারা মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। মুক্ত আলোচনায় সংশ্লিষ্টরা জানান সার্ভারের সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে এবং ইন্টারনেট কানেকশন আরও দ্রুত হবে।
উল্লেখ্য, ৮ জুন উদ্বোধন হওয়া ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৪ আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে। ‘ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪’ চলাকালীন সেবাগ্রহীতাদের গুরুত্বপূর্ণ যেসব সুবিধা প্রদান করা হবে তার মধ্যে রয়েছে, ই-নামজারির আবেদন করার বিষয়ে অবহিতকরণ ও সহযোগিতা প্রদান, নিষ্পত্তিকৃত এলএ কেইসের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান, অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ, অনলাইনে আবেদনকৃত মৌজা ম্যাপ ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ, মাঠপর্যায়ে চলমান জরিপ কার্যক্রম বিষয়ে গণশুনানি, আপত্তি/আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ ও রেকর্ড হস্তান্তরসহ জনগণকে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান ইত্যাদি।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথ স্থাপন করা হবে এবং সেখানে একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। এবার প্রথমবারের মত ৮টি বিভাগে বিশেষভাবে প্রস্তুত ৮টি গাড়ি ভ্রাম্যমাণ স্মার্ট ভূমি সেবা প্রদান করবে। ভূমিসেবা নিয়ে সহজবোধ্য বই ‘ভূমি আমার ঠিকানা’ বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন