আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এজেন্সি মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস আবারও ব্র্যাক ব্যাংককে সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিং দিয়েছে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিং ‘স্থিতিশীল’ আউটলুক অর্জন করেছে ব্যাংকটি।
বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকই একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাংক, যা পেয়েছে ‘বি১’ ক্রেডিট রেটিং। এই রেটিংটি বাংলাদেশের সার্বভৌম রেটিংয়ের সমতুল্য। এই অনন্য অর্জনটি ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৯ সাল থেকে বজায় রেখেছে।
এই বিশ্ববিখ্যাত ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক ‘নেতিবাচক’ থেকে পরিবর্তন করে ‘স্থিতিশীল’- এ উন্নীত করেছে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির মুনাফা এবং তারল্য-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। এ থেকে আরও বোঝা যায় যে, পদ্ধতিগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রতি সরকার সহায়তা অব্যাহত রাখবে, যা মুডিসেরও প্রত্যাশা।
মুডিস- এর মতে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের কোর ক্যাপিটাল বেইজ সবচেয়ে শক্তিশালী। এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিংসও ব্র্যাক ব্যাংককে ‘স্থিতিশীল’ আউটলুকে ‘বি+’ ক্রেডিট রেটিং দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ব্র্যাক ব্যাংকই বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিংস রেট করেছে। বিশ্বের শীর্ষ দুই রেটিং এজেন্সি মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস এবং এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিংস থেকে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ রেটিং অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়্যালিটি, লিকুইডিটি এবং মূলধন পর্যাপ্ততা যে দেশে বিদ্যমান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজের চেয়ে অনেক ভালো, তার-ই প্রতিফলন। এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক মডেল, বিস্তৃত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক, গতিশীল ম্যানেজমেন্ট টিম এবং শক্তিশালী কর্পোরেট সুশাসন সংস্কৃতির দ্বারা।
ব্যাংকের এই ‘স্থিতিশীল’ আউটলুক এটি নির্দেশ করে যে, ব্যাংকটি ধীরস্থিরভাবে বাংলাদেশে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে এবং আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ফাইন্যান্সিয়াল প্রোফাইল আরও শক্তিশালী হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশের দুটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (সিআরএবি) এবং ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড কর্তৃক সর্বোচ্চ রেটিং ‘এএএ’ অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ক্রেডিট রেটিংয়ের এমন অর্জন সম্পর্কে ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, বছরের পর বছর ধরে ক্রেডিট রেটিংয়ে আমাদের এমন শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে রয়েছে আমাদের ব্যালেন্সশিট এবং লিকুইডিটির দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী পরিপালন সংস্কৃতি, স্বাধীন ও ভিশনারি পরিচালনা পর্ষদ এবং পেশাদার ও দক্ষ ম্যানেজমেন্ট টিমের ভূমিকা। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে দেশের ‘সার্বভৌম রেটিংয়ের সমতুল্য’ ক্রেডিট রেটিং অর্জন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।
তিনি আরও বলেন, এই দারুণ মুহূর্তে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, সহকর্মী, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিচালনা পর্ষদ এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রতি। তাদের অবিচল আস্থা এবং সহায়তাই আমাদের এমন সাফল্যের চাবিকাঠি।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৮৭টি শাখা, ৪০টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৫৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১ হাজার ৪০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। চৌদ্দ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২২ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
মন্তব্য করুন