কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে’

একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'ফান্ড আওয়ার ফিউচার' ক্যাম্পেইন। ছবি : সংগৃহীত
একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'ফান্ড আওয়ার ফিউচার' ক্যাম্পেইন। ছবি : সংগৃহীত

একশনএইড এর পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গ্লোবাল সাউথ এর দেশগুলো যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে তার ২০ গুণ বেশি অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানী এবং বাণিজ্যিক কৃষিতে করছে বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২০১৬ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে, ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের জন্য ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার, এটিও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় ৷ জলবায়ু সংকট সৃষ্টির পেছনে অর্থায়নকারী শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি, সিটিগ্রুপ, জেপি মর্গান চেসসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'ফান্ড আওয়ার ফিউচার' ক্যাম্পেইনে সমীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের শীর্ষ ব্যাংকগুলি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বাণিজ্যিক কৃষিতে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপে এইচএসবিসি, বিএনপি পারিবাস, সোসাইটি জেনারেল, বার্কলেস; আমেরিকাতে সিটি ব্যাংক, জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অফ আমেরিকা; এশিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়না, চায়না সিআইটিআইসি ব্যাংক, ব্যাংক অফ চায়না এবং মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, গ্লোবাল সাউথের বাণিজ্যিক কৃষির অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বায়ের ২০১৬ সাল থেকে ২০ দশমিক ৬ বিলিয়ন অর্থায়ন পেয়েছে।

'ফান্ড আওয়ার ফিউচার' ক্যাম্পেইন উদ্বোধনের সময় আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমাধানের চেয়ে আমরা দ্রুত সমস্যা তৈরি করছি। সমস্যা সমাধান করতে এবং নীতি কার্যকর করতে আমাদের একটি সামগ্রিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের কোন সুস্পষ্ট নেট শূন্য গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নেই; যেটি স্থাপন করা প্রয়োজন এবং টেকসই সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় প্রয়োজন। আমাদের সমাধানের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আমাদেরকেই সঠিক পথ খুঁজে বের করতে হবে।

আইসিসিসিএডি এর পরিচালক ড. সালেমুল হক বলেন, সরকারকে আমাদের বিশ্বের দূষণকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বে কিছু কিছু সরকার আছে যারা দূষণকারীদের পক্ষে কথা বলে। ধনী ব্যক্তিরা সমস্যা তৈরি করছে এবং দরিদ্র মানুষ তার পরিণাম ভোগ করছে। জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে।

একশনএইড বাংলাদেশে-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যে কীভাবে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আমাদের জলবায়ু সংকটের মূল চালক। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ, জবাবদিহিতা এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সুন্দর পৃথিবীর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের দায়িত্বের সঙ্গে অর্থায়ন করতে বলি। আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি তার বক্তৃতায় বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি থেকে সরে এসে বিকল্প টেকসই রুটের জন্য তা কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা ভালো যে সরকার নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য যদি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাস, তাহলে আমাদেরও একটি হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক পরিচালক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের বাসযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংকগুলো টেকসই রেটিং পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। অর্থ যেমন জলবায়ু সংকটে ইন্ধন জোগাচ্ছে, তেমনি নিয়ন্ত্রকদের উচিত টেকসই এবং নবায়নণযোগ্য বিনিয়োগের দিকে ব্যাংকগুলোকে ধাবিত করা।

প্যানেল আলোচনায় আনোয়ার ফারুক, সাবেক সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার; শুভাশীষ বড়ুয়া, হেড অব ইমপ্যাক্ট বিজনেস, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ; ড. আতিক রহমান, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ; সামিয়া চৌধুরী, সিইও, এমটিবি ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য বিশিষ্ট আলোচকরা বক্তব্য রাখেন।

প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলিকে অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানী সম্প্রসারণ কার্যক্রমের জন্য প্রকল্প এবং কর্পোরেট অর্থায়ন বন্ধ করার এবং অন্যান্য সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানী এবং ক্ষতিকারক বাণিজ্যিক কৃষি কার্যক্রমের অর্থায়ন দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও সুপারিশ করা হয় যে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই কমিউনিটির অধিকার রক্ষার জন্য উপযোগী পলিসি গ্রহণ করতে হবে করতে হবে। প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানী সম্প্রসারণে অর্থায়ন বন্ধ করতে জাতীয় এবং আঞ্চলিক সরকারকে অবশ্যই ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে অধিক বিনিয়োগ ও গুরত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেএফসি এখন রাজশাহী ও কুমিল্লাতে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন সমন্বয়ক তরিকুল

জামায়াত গণমানুষের কাছে পরিক্ষিত শক্তি : সেলিম উদ্দিন

সেই কানুর ফাঁসি চেয়েছিল আ.লীগ

ওমরাহ পালনকারীদের জন্য নতুন ঘোষণা

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ষড়যন্ত্র : সারজিস

আগামী জুনের মধ্যেই নির্বাচন চান লায়ন ফারুক

কম্বল বিতরণ না করেই ফিরলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ক্রমেই অনিশ্চয়তা বাড়ছে

রিমান্ড শেষে কামরুল ইসলাম ও সোলায়মান সেলিম কারাগারে

১০

পূর্বাচলের সরকারি প্লটে অনিয়ম / শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

১১

আগামী নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে না : বদিউল আলম

১২

ঢাবিতে দেশের একমাত্র নন-ফিকশন বইমেলা ২৮ ডিসেম্বর শুরু

১৩

স্ত্রীকে উপহার দিতে পৌরসভার ‘লাভ চিহ্ন’ চুরি, অতঃপর...

১৪

বিশ্বমানের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম এখন ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে

১৫

সীমান্তবর্তী নদীতে পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ

১৬

বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১৭

দেশকে প্রসারিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত : আলতাফ চৌধুরী

১৮

সচিব নিবাসেও আগুন

১৯

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফখরুলের বিবৃতি

২০
X