ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফোরাম ফর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ২০২৫’।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা ডেইজিওন এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর)।
‘ইউনাইটেড ফর ট্রান্সফরমেটিভ গ্রিন ক্যাম্পাস অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ফিউচার’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ক সমাধানে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের উপদেষ্টা অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ‘মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের অনেক বেশি ব্যবহার করছে। এই হারটা প্রকৃতি আমাদের যা দেয় তার চেয়ে ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি।’
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও বেশি ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব চর্চা করতে হবে। এটা কার্বন নিঃসরণ করার ক্ষেত্রে এবং সে সঙ্গে টেকসই জীবনের উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করার জন্যও।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নতুন ক্যাম্পাসকে পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বিদ্রিং বিল্ডিং, এখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, এখানে সৌরশক্তির ব্যবহার হয়, যা ৪০ শতাংশ এনার্জি সাশ্রয় করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা করবে। তাই তাদের এখন থেকেই প্রস্তুত করতে হবে যাতে তারা নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ও দূরদর্শী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং শিক। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শক্তি ও সৃজনশীলতা রয়েছে, এটা আমাদের একটি টেকসই ভবিষ্যতের আশ্বাস দেয়।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডাউল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জিরো-ওয়েস্ট ক্যাম্পেইনের মতো উদ্যোগগুলো সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল নেতৃত্বের উদাহরণ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশের প্রতি সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে। প্রাকৃতিক বাতাস, সৌরশক্তির ব্যবহার এবং পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পরিবেশবান্ধব এসব উদ্যোগ শুধু দায়িত্বশীলতার প্রতীকই নয়, এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও একাডেমিক উৎকর্ষের প্রতিও বিশ্ববিদ্যালয়টির দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিচয় বহন করছে। আর এসব উদ্যোগ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিথ্রিআরের ডিরেক্টর রৌফা খানম। টেকসই জীবনযাপনের চর্চা ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।
বৈশ্বিক পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় তরুণদের নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ডেইজিওন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড মলিক।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিথ্রিইআরের ফেলো ড. দ্বিজেন লাল মল্লিক, সেন্টারটির কো-অর্ডিনেটর শারমিন নাহার নীপা এবং ডেইজিওনের কো-অর্ডিনেটর জিয়েয়ং লিম।
এ অনুষ্ঠানে সিথ্রিইআর ও ডেইজিওনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। উচ্চশিক্ষায় পরিবেশবিষয়ক উদ্ভাবন ও সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে এ সমঝোতা স্মারক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ ফোরামের এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং ডেইজিওনের শিক্ষার্থীদের পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী। এর মধ্যে ছিল- পুনর্ব্যবহার ও রিসাইক্লিং বিষয়ক কর্মশালা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং কমিউনিটি পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, যা শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মন্তব্য করুন