গাজীপুরের কাশিমপুরে র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চালু হওয়া দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গাড়ি কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে মিতসুবিশি ও প্রোটনের গাড়ি রঙকরণ ও সংযোজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিকানাধীন এই কারখানাটি ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এখানেই প্রথমবারের মতো জাপানি মানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে তৈরি মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার গাড়ি চলতি বছরের জুন মাসে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ আমদানিকৃত এক্সপ্যান্ডারের দাম ৪৬ লাখ টাকার কাছাকাছি। তবে, শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা। বর্তমানে ৯৮ হাজার বর্গফুটের বিশাল এই কারখানায় প্রায় এক বছর ধরে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। র্যানকন কারখানায় গাড়ির রঙকরণ ও সংযোজন ছাড়াও রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি শপ, মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং যন্ত্রাংশ সংরক্ষণাগার। উৎপাদন লাইনে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ও নিউমেটিক যন্ত্রপাতি, টর্ক রেঞ্চ, ওভারহেড ক্রেইন এবং উন্নত মানের লিফট। এ ছাড়া চীনের জ্যাক পিকআপ ট্রাক ও জার্মান প্রযুক্তিতে নির্মিত মার্সিডিজ-বেঞ্জের বাস শুধু সংযোজন করা হয়।
র্যানকনের অটোমোটিভ ডিভিশনের বিপণন প্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন বলেন, সরকার দেশীয় কারখানার জন্য যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালে শুল্ক কমিয়েছে। এতে গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে। আমাদের পরীক্ষাগার ও পরীক্ষণ ট্র্যাক বিশ্বমানের, যেখানে প্রতিটি গাড়ির ব্রেকিং সিস্টেম, হুইল ব্যালান্স, এমিশন, এডিএএসসহ সবকিছুই পরীক্ষা করা হয়। ২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পরীক্ষামূলক ট্র্যাকে প্রতিটি গাড়িকে ১৬টি বড় প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চালিয়ে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে কারখানায় মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডারের পাশাপাশি প্রোটন এক্স৭০ গাড়িও সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়া মার্সিডিজ অনুমোদিত বাস (ওএফ১৬২৩) ও জেএসি ডি৮৭০১ ট্রাকের সংযোজন সফলভাবে শেষ হয়েছে। পরবর্তী ধাপে প্রোটন এক্স৯০, জেএসি টি৮, জেএসি টি৯, এবং এমজি ব্র্যান্ডের কয়েকটি মডেল সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কারখানায় বর্তমানে কাজ করছেন ২৫০ জনের বেশি প্রশিক্ষিত কর্মী, যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রায় ২ হাজার মিতসুবিশি, ৪০০ প্রোটন, ৩৬০ মার্সিডিজ বাস এবং ৬০০ জেএসি ট্রাক বাজারজাত করার জন্য।
প্রায় ৫৭ একর জায়গায় অবস্থিত র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- র্যানকন মোটরবাইক লিমিটেড, র্যানকন ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড ও র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তাদের মধ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যানকন মোটরবাইকের কারখানায় জাপানের সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন হয়, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যানকন ইলেকট্রনিক্সের কারখানায় তোশিবা, এলজি, স্যামসাং প্রভৃতি ব্রান্ডের টেলিভিশন-ফ্রিজ তৈরি ও সংযোজন হয়। আর র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় তৈরি হয় ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি।
র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে এ কারখানায় এমজি গাড়িও সংযোজন করা হবে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এ কারখানায় চার ধরনের ব্যক্তিগত (প্যাসেঞ্জার) গাড়ি ও দুই ধরনের বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গাড়ি সংযোজন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা। দেশে একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের টেস্ট ট্র্যাক রয়েছে এ কারখানায়।
মন্তব্য করুন