বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৪র্থ সমাবর্তন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এসময় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আমরা গণতন্ত্র পাইনি, ন্যায্য সমাজ পাইনি। সেদিনের সেই না পাওয়া থেকে জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান শুধু একটি আন্দোলন নয়, বরং অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে সূত্রপাত হওয়া একটা আন্দোলনের যবনিকাপাত হয়েছে চরম ফ্যাসিস্ট একটি অধ্যায়ের পতনের মাধ্যমে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর সমগ্র জাতি আজ স্বপ্ন দেখছে শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার, যে দায়িত্ব শিক্ষার্থীদেরই নিতে হবে। একটি সুষম বণ্টন ব্যবস্থার সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থা সামগ্রিকভাবেই একটা নাজুক অবস্থা অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক দলাদলি, পারস্পরিক সহনশীলতার অভাব, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির অপসংস্কৃতি ও অপতৎপরতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদ দ্বারা ছাত্রদের নেতৃত্ব বিকাশের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। অনিয়মিত হলেও গণবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের নেতৃত্ব বিকাশের সেই সুযোগ দিয়েছে, যা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণবিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য করেছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন দূরদর্শী এবং স্বপ্নদ্রষ্টা। যেখানেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্পর্শ পেয়েছে সেখানেই নতুনের জন্ম হয়েছে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্তরা দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সমাবর্তন বক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবুল কাসেম চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমরা কোথায় আছি। আমরা ভালো মানুষ হতে পারিনি। ভালো মানুষ তৈরি করার জন্যই আমাদের এই গণবিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার সহকর্মীদের নিয়ে এদেশে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের জন্য একটি বীজ বপণ করেছিলেন। সেই বীজ থেকে শাখা-প্রশাখাসহ বিরাট এক বৃক্ষে পরিণত হয়েছে গণবিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস, গণপ্রকাশনী, গণমুদ্রণ, নারীকেন্দ্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দীন খান বলেন, শুধু ডিগ্রি দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। দক্ষ ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন মানুষ তৈরি করতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পাঠদান, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় এবং সর্বোপরি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শেষ হলেও, এই শেষ থেকেই আপনাদের নতুন জীবন শুরু হবে। শিক্ষা জীবনে অর্জিত জ্ঞান এখন বাস্তব কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। যদিও শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই, তাই জীবনভর তা অর্জনের মাধ্যমে আরো বড় সাফল্য অর্জন করতে হবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়ালিউল ইসলাম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম। গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মণী শিরীন পারভীন হকসহ ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান। এ বারের সমাবর্তনে ৭ হাজার ৭২৭ জন গ্রাজুয়েট ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন এবং ২ হাজার ৪৭৮ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া সকালে সমাবর্তন শোভাযাত্রায় সভাপতি, অন্যান্য অতিথিসহ গ্রাজুয়েটরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি পরিচালনা করেন ফার্মেসি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মোকলেছুর রহমান সরকার।
মন্তব্য করুন