পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) ৩০৪.৪৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
চলতি হিসাব ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ে কোম্পানিটির ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৪৩তম সভায় আলোচ্য সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বাণিজ্য অস্থিরতা, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে পড়ে। অধিকন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে কাঁচামালের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সে সঙ্গে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি হারের প্রভাব পড়েছে কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ের ওপর। এছাড়াও ফাইন্যান্স অ্যাক্ট ২০২৪-এর আওতায় রেফ্রিজারেটর সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার পাশাপাশি এয়ারকন্ডিশনারের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
এ সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন হিসেবে চলতি হিসাব গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ে বিক্রয়ের বিপরীতে কোম্পানির নিট প্রফিট মার্জিন আগের বছরের একই সময়ের ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। কোম্পানির অপারেটিং প্রফিট মার্জিনও পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ থেকে কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। এদিকে আলোচ্য সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) নিট রেভিনিউয়ের বিপরীতে আর্থিক ব্যয়ের শতকরা হার পূববর্তী বছরের একই সময়ের ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সমাপ্ত সময়ে ওয়ালটনের কর-পরবর্তী নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৪ দশমিক ৪৭ কোটি টাকায়। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৩৪০ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা।
চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) ওয়ালটনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১০ দশমিক ০৫ টাকা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ২৪ টাকা। তবে চলতি হিসাব বছরের ২য় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ে ওয়ালটনের ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের ৪ দশমিক ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ১৩ টাকা হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত ২৬৪ দশমিক ০৭ টাকা এবং পুনর্মূল্যায়নসহ ৩৬৫ দশমিক ৪৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধ শেষে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৩ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৭ দশমিক ১৬ টাকা।
উল্লেখ্য, আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতার বিপরীতে গ্রাহকদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সরবরাহকারীদের অর্থপ্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিক্রির প্রধান মৌসুমে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ে প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল ক্রয় করা হয়। ফলে আলোচ্য সময়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারি কোষাগারে এবং কাঁচামাল সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূলত, এসব কারণে গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ে কোম্পানির এনওসিএফপিএস হ্রাস পায়।
পরবর্তী দুই প্রান্তিক (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) বিক্রির প্রধান মৌসুম হওয়ায় কোম্পানির মুনাফা আরো সন্তোষজনক অবস্থানে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট।
মন্তব্য করুন