বিমানযাত্রা এখন এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত যাত্রার জন্য। তবে বিমানের টিকিটের দাম সাধারণত চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ওঠানামা করে। অনেক সময় আমরা ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে টিকিটের দাম অনেক বেশি হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কার্যকর কৌশল জানলে আপনি সস্তায় টিকিট পেতে পারেন। এখানে আমরা আপনাকে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জানাচ্ছি, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি কম দামে বিমানের টিকিট কিনতে পারবেন।
১. মঙ্গলবার বা বুধবার টিকিট বুক করুন বিমান টিকিট কেনার সেরা দিনগুলো হলো মঙ্গলবার এবং বুধবার। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ এয়ারলাইনস তাদের বুকিং সিস্টেম সাধারণত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আপডেট করে। এসময় তারা সস্তা টিকিটের কোটা প্রদান করে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ যাত্রী সাধারণত শুক্রবার, শনিবার কিংবা রবিবার টিকিটের দাম চেক করেন, ফলে এই দিনগুলোতে দাম অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই, আপনি যদি মঙ্গলবার বা বুধবার টিকিট বুক করেন, তবে সস্তায় টিকিট পেতে পারেন।
২. ভ্রমণের তারিখের কমপক্ষে ২১ দিন আগে বুক করুন বিভিন্ন গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, বিমান টিকিট বুক করার জন্য ভ্রমণের তারিখের কমপক্ষে ২১ দিন আগে বুকিং করা উচিত। বেশিরভাগ এয়ারলাইনস তাদের সিস্টেমে প্রথম কিছু যাত্রীর জন্য সস্তা টিকিট অফার করে, যা নির্দিষ্ট কোটা হিসেবে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা থেকে লন্ডন যাওয়ার ফ্লাইটে প্রথম ২০ জন যাত্রী সবচেয়ে কম দামে টিকিট পাবেন। এরপর, দাম বাড়তে থাকে। তাই, যদি আপনি আগেভাগে টিকিট বুক করেন, তাহলে কম দামে টিকিট পেতে পারেন।
৩. কম ব্যস্ত দিনগুলোতে ফ্লাইট বেছে নিন এয়ারলাইনস সাধারণত মঙ্গলবার এবং বুধবারকে কম ব্যস্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত করে, যখন যাত্রীদের চাপ কম থাকে। সেই তুলনায় শুক্রবার এবং রবিবার বেশি ব্যস্ত দিন, কারণ ওই সময়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী যাত্রা করেন। এই ব্যস্ত সময়ে টিকিটের দামও অনেক বেশি থাকে। সুতরাং যদি আপনি সস্তা টিকিট চান, তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে মঙ্গলবার বা বুধবার ভ্রমণ করার চেষ্টা করুন।
৪. আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ‘বেস্ট ডিল’ অনুসন্ধান করুন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য বেশিরভাগ এয়ারলাইনস ১১ থেকে ১২ সপ্তাহ আগে ‘বেস্ট ডিল’ অফার করে। এই সময়ের মধ্যে যখন আপনিই নিয়মিত দাম চেক করবেন, তখন অনেক ভালো অফার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর মধ্যে কিছু সস্তা টিকিট এমনকি ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ছাড়ও পেতে পারেন। তাই, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য সময়মতো টিকিটের দাম চেক করুন।
৫. ছোট এয়ারপোর্ট বেছে নিন এয়ারপোর্টের অবস্থানও টিকিটের দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। বেশিরভাগ যাত্রীরা বড় এয়ারপোর্টে নামতে পছন্দ করেন, যেমন লন্ডনে হিথ্রো। তবে, আপনি যদি এই ধরনের বড় এয়ারপোর্টে না গিয়ে ছোট এয়ারপোর্ট বেছে নেন, তাহলে কম টিকিট পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডন যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি হিথ্রো এয়ারপোর্টের পরিবর্তে ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে নামতে পারেন এবং সেখান থেকে ট্রেনে লন্ডন পৌঁছাতে পারেন। ছোট এয়ারপোর্টের টিকিট সাধারণত সস্তা হয়, তবে একটু বাড়তি সময় নিলেও সুবিধা হতে পারে।
৬. কুকিজ ক্লিয়ার করুন অনেকে জানেন না, একাধিক বার একই এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে তাদের সিস্টেম আপনার ব্রাউজারের মাধ্যমে কুকিজ রেকর্ড করে রাখে। এটি আপনার আগের অনুসন্ধানগুলোর ওপর ভিত্তি করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, যখন আপনি একই টিকিটের দাম বারবার চেক করেন, তখন দাম বাড়তে থাকে। আপনার ব্রাউজারের কুকিজ ক্লিয়ার করার অভ্যাস যদি গড়ে তোলেন। যার ফলে সিস্টেম আপনার ব্রাউজারকে নতুনভাবে দেখতে পাবে এবং টিকিটের দামও কম রাখবে।
৭. দাম যাচাই করুন শুধু একটি ওয়েবসাইটে টিকিট খোঁজা একদমই যথেষ্ট নয়। বরং আপনি যেই টিকিটটি কিনতে চান, তার দাম গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাচাই করুন। অনেক সময় আপনি দেখতে পাবেন যে, একই এয়ারলাইনসের টিকিট এক ওয়েবসাইটে একদম সস্তা, কিন্তু অন্য ওয়েবসাইটে দাম কিছুটা বেশি। ফলে, যদি আপনি একাধিক ওয়েবসাইটে দাম যাচাই করেন, তাহলে আপনি আরও সস্তায় টিকিট পেতে পারেন।
বিমান টিকিট কেনার সময় সঠিক কৌশল ব্যবহার করলে আপনি অনেক টাকা বাঁচাতে পারেন। সঠিক সময়ে বুকিং করা, সঠিক দিন নির্বাচন করা এবং দাম যাচাই করা আপনার ভ্রমণের খরচ কমিয়ে দিতে পারে। তাই পরবর্তী বার যখন বিমান টিকিট কেনার পরিকল্পনা করবেন, তখন এই টিপসগুলো মনে রাখুন এবং কম দামে সস্তা টিকিট কিনে একটি স্মরণীয় যাত্রা উপভোগ করুন।
মন্তব্য করুন