ওয়াহিদ রুবেল, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অস্থির রোহিঙ্গা ক্যাম্প, হুমকিতে নিরাপত্তা

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অস্থির রোহিঙ্গা ক্যাম্প, হুমকিতে নিরাপত্তা

আধিপত্য বিস্তার করতে সশস্ত্র শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক এম-১৬ ও একে-৪৭ রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্র। এতে পুরো ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।

নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গত চার মাসে গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মারা গেছেন দুজন। এরপরই অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে।

রোহিঙ্গাদের স্বাধীকার আদায়ে নয়, বরং আধিপত্য বিস্তারে সশস্ত্র মহড়া চালাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করছে এম-১৬, একে-৪৭ এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র। জিরো পয়েন্ট ও ক্যাম্পে মজুত করছে গ্রেনেড, রকেট লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র। গত চার মাসে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে প্রাণ গেছে অন্তত ২৩ জনের।

এর আগেও তমব্রু সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্তের জিরো পয়েন্টে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা ও গুদাম। ফলে কক্সবাজারের নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

তবে জেলা পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনিসহ তার সংগঠনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বার্মিজ ভাষায় এসব পোস্টার লাগানো হয়। তবে কারা এসব পোস্টার লাগিয়েছে তার কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ।

আট নম্বর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাম্পে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে থাকা নামগুলোর সবাই সন্ত্রাসী। তারা একাধিক মামলার পলাতক আসামি। আমরাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজছি। ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে আমাদের নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।’

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের স্বাধীকার আদায়ে নয় বরং মাদক ব্যবসা এবং ক্যাম্পে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সশস্ত্র মহড়া চালাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। জিরো পয়েন্ট ও ক্যাম্পে মজুত করছে গ্রেনেড, রকেট লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়াকিটকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইম্যুসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে তারা। অনেকে আবার মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজে লাগাচ্ছে।

তাদের দেওয়া তথ্য মতে, স্বাধীকার আদায়ের কথা বললেও আরসা মূলত মিয়ানমারের সৃষ্টি। এ সংগঠন রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে প্রধান বাধা। মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে প্রত্যাবাসনের দাবি বিশ্বজুড়ে জোরালো হওয়ায় তাকে হত্যা করেছে এ সংগঠনের নেতারা। এ ঘটনায় আরসাপ্রধান আতা উল্লাহ জুনুনিকে প্রধান করে মামলাও করা হয়েছে।

বর্তমানে ক্যাম্পজুড়ে রাজত্ব করছে আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপ। আর ক্যাম্পে রয়েছে তাদের উপগ্রুপ। মূলত ইয়াবা ব্যবসাকে ঘিরেই খুনের মহড়া চলে তাদের মাঝে। তাদের উগ্রতা ক্যাম্প ছাড়িয়ে প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, চার মাসে উখিয়ার একাধিক আশ্রয়শিবিরে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৩ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা মাঝি এবং পাঁচজন আরসার সদস্য।

যদিও রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করেছে এপিবিএন। ক্যাম্পের বাইরে স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

রোহিঙ্গাদের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, কথিত আরসা এবং মাদক ব্যবসায়ী নবী হোসেন গ্রুপ মিয়ানমার সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে। তাদের ভারী অস্ত্র, গ্রেনেড এবং ফ্রিতে ইয়াবা সরবরাহ করে থাকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ। নবী হোসনের সঙ্গে এ গ্রুপের সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থানের কয়েকটি ছবি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এসব গ্রেনেড দিয়ে ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম নবী হোসেন। কিন্তু সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারিতে এসব অস্ত্র কীভাবে আসে সেটিও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির সদ্য বদলি হওয়া অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবির বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, আমাদের জন্যও হুমকি। দেশে ৫০ ভাগের বেশি মাদক তাদের হাত ধরে ঢুকছে। আমরা তাদের ধরতে কাজ করছি।’

এ বিষয়ে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এসব গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের ওপর হামলা, ক্যাম্পে খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। আমরা ৮ এপিবিএন পুলিশ সব সময় কঠোরভাবে এসব সন্ত্রাসীকে দমন করতে কাজ করছি। অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ক্যাম্পে ইনটেনসিভ প্যাট্রোলিং ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রেনেড উদ্ধারের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে।’

কক্সবাজার জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে না। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘নবীর ঘরে গ্রেনেড কীভাবে এসেছে, তা জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হিটস্ট্রোকে পেপার বিক্রেতার মৃত্যু

শ্রমিকদের ভিসা সহজ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী আহ্বান

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী 

বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার

খেলা দেখা নিয়ে অবাক তথ্য মোস্তাফিজের

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

মিরসরাইয়ে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

বিশ্বজয়ী অধিনায়কের সংগ্রহে ‘১০০০’ ব্যাট

মার্ক জাকারবার্গকে টপকে গেলেন ইলন মাস্ক

থাইল্যান্ডের কাছে চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

১০

আমার দেখা ভিয়েতনাম

১১

মানুষের কষ্টে যুবলীগ ঘরে বসে থাকে না: পরশ

১২

মার্কিন সহায়তায় কি বাঁচবে ইউক্রেন?

১৩

গরমে গরিবের এসি যেন মাটির ঘর

১৪

টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

১৫

বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাকরণে বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

১৬

দলবদলে সরগরম থাকবে বার্সা!

১৭

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ সমঝোতা ও চুক্তি সই

১৮

ফ্লোরিডায় কনসাল জেনারেল হলেন সেহেলী সাবরীন

১৯

গুরুদাসপুরে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ

২০
*/ ?>
X