কালবেলা প্রতিবেদক, ঢাকা ও বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বম পার্টির সঙ্গে চুক্তি নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর

বম পার্টির সঙ্গে চুক্তি নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর

নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সঙ্গে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) চুক্তি হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে সংগঠনটি বম পার্টি নামে পরিচিত। গত বছর এ চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছর পর্যন্ত জামা’আতুল আনসারের সদস্যদের দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। সে প্রশিক্ষণ শুরুও হয়েছিল।

বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার বান্দরবানে র‌্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

কয়েক দিন ধরেই পাহাড়ে এ অভিযান চলছিল। এ সময় দুর্গম এলাকায় প্রচারপত্র বিলি, মাইকিংও করা হয়। জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য প্রদানকারীকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় লিফলেটে। পাশাপাশি জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়।

গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে সাতজন নতুন জঙ্গি দলের সদস্য, যারা ঘর ছেড়ে কথিত হিজরতের নামে পাহাড়ে কেএনএফ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। অন্য তিনজন কেএনএফের সদস্য।

গ্রেপ্তার ১০ জন হলেন—সুনামগঞ্জের সৈয়দ মারুফ আহমদ মানিক (৩১) ও সুনামগঞ্জের রুফু মিয়া (২৬), পিরোজপুরের ইমরান হোসাইন শাওন (৩১), ঝিনাইদহের কাওসার শিশির (৪৬), সিলেটের জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু ও আবু বক্কর সিদ্দিক বাপ্পি (২৩), বরিশালের ইব্রাহিম আলী (১৯) এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ির জৌথান স্যাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) ও মাল সম বম (২০)। শেষের তিনজন কেএনএফের সামরিক শাখার সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা নতুন জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ৯টি বন্দুক, বন্দুকের ৫০ রাউন্ড গুলি, কার্তুজের ৬৩টি কেইস, ছয়টি হাতবোমা, কার্তুজের দুটি বেল্ট, একটি দেশি পিস্তল, দেশি অস্ত্র, একটি ওয়াকিটকি, ওয়াকিটকির চার্জার তিনটি, ১০টি মানচিত্র এবং বিভিন্ন পোশাক উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের ২০২১ সালে চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফের সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামা’আতুল আনসার।

বান্দরবানে র‌্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওই জঙ্গি দলের যে সদস্যদের এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণের কথা জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার মারুফ আহমেদ ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হাফেজ নাঈমের আপন ছোট ভাই। এ মারুফ জামা’আতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং সামরিক শাখার দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি।

গ্রেপ্তার ইমরান হোসাইন শাওনের মূল কাজ ছিল বরিশাল অঞ্চলের তরুণদের খুঁজে বের করে তাদের সংগঠনে যুক্ত করা। গ্রেপ্তার কাওসার ওরফে শিশির আগে দর্জির দোকানে কাজ করত। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজিবির এ সদস্য নাইক্ষ্যংছড়িতে ছয় মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলম সিলেটের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ছিল, পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা অফিসে কাজ করত। ইব্রাহীম স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। আবু বক্কর সিদ্দিক সিলেটে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। সে শূরা সদস্য মাসুকুর রহমানের মাধ্যমে সংগঠনটিতে জড়ায়। রুফু মিয়া এক মাসের বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ শেষে পার্বত্য অঞ্চলে পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য আসে।

নতুন সংগঠনের দায়িত্বে যারা

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আমির পলাতক আনিসুর রহমান মাহমুদ। সংগঠনটি ছয়জন শূরা সদস্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারা হলেন দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুন, সামরিক শাখার প্রধান মাসকুর রহমান, সামরিক শাখার সহকারী প্রধান মারুফ আহমেদ, অর্থ, গণমাধ্যম ও সমতল শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজ এবং আলেম বিভাগের প্রধান ভোলার শায়েখ।

র‌্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে পাহাড়ের যে সংগঠনের চুক্তির কথা বলছে, কেএনএফ নামে সেই সংগঠনটি স্থানীয়ভাবে বম পার্টি নামেও পরিচিত।

জানা গেছে, জনসংহতি সমিতি ভেঙে তৈরি হওয়া কয়েকটি দল বহু বছর ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয়। এর মধ্যেই কেএনএফের সক্রিয় হয়ে ওঠার খবর কিছুদিন ধরে আসছিল। এ সংগঠনটি নিজেদের তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর জনজাতিগুলোর ‘প্রতিনিধিত্বকারী’ হিসেবে তুলে ধরে। এ সংগঠন ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়; যেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না; থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমিকার শোক সইতে না পেরে প্রেমিকের আত্মহত্যা

বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার মুশফিক বললেন মাশাআল্লাহ

মার্কিন চাপকে পাত্তাই দিল না ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা

সমাবর্তনের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের সনদ আটকে না রাখার নির্দেশ

তেঁতুলিয়ায় নেমে গেছে পানির স্তর, চরম সংকটে কয়েক গ্রামবাসী

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : ওবায়দুল কাদের

উষ্ণতম এপ্রিলে পুড়ছে দেশ, কবে আসবে স্বস্তির বৃষ্টি

জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি

দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কা, নিহত ১

কুয়াকাটায় কাঁদতে কাঁদতে ইসতিসকার নামাজ আদায়  

১০

কোপায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টাইনকে নিয়ে শঙ্কা

১১

চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হবে : শেখ হাসিনা

১২

গরমে স্মার্টফোন বিস্ফোরণ এড়াবেন যেভাবে

১৩

থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

১৪

ভোলায় দ্বিতীয়বার বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

১৫

ইপিএলে সর্বোচ্চ গোলের নতুন রেকর্ড

১৬

তীব্র গরমে বেড়েছে রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা 

১৭

ইমরান খানের ওপর বড় নিষেধাজ্ঞা আদালতের

১৮

গেইলকে ভয় পান বোল্ট!

১৯

৪৬তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা শুরু

২০
*/ ?>
X