পেছনে সারি সারি গাছ। সামনে পাকা রাস্তা। পাখির চোখে উপর থেকে তাকালে মনে হবে শৌখিন বাগান বাড়ি কিংবা রঙিন কোনো গ্রাম। চোখ জুড়ানো এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাতেই ঠাঁই হয়েছে চট্টগ্রামের ভূমিহীন-গৃহহীন লোকজনের। যেখানে লাল-সবুজ রঙিন ঢেউ টিনে সাজানো হয়েছে বসতঘর। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ আছে যাবতীয় সব সুযোগ-সুবিধা।
পঞ্চম ধাপে এবার কোরবানি ঈদের আগেই চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় এমন স্বপ্ন পূরণের ঠিকানায় উঠছেন আরও ২৫০ পরিবার। মূলত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনেই এ উদ্যোগ। প্রকল্পটি শুরুর পর চট্টগ্রাম জেলার ১২টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, চন্দনাইশ ও সন্দ্বীপসহ বাকি তিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সবমিলিয়ে বলা চলে সহসাই ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত এলাকা হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ টি উপজেলার মধ্যে ১২টি উপজেলা যথাক্রমে পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, মীরসরাই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড, চন্দনাইশ ও সন্দ্বীপ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই তিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে এবং একই সাথে চট্টগ্রাম জেলাকেও ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। তাছাড়া মঙ্গলবার (১১ জুন) চট্টগ্রাম জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৫ম পর্যায়ের (২য় ধাপ) ২৩৪টি এবং জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপন করে একক ঘর নির্মাণ ১৬ টিসহ ২৫০টি পরিবারকে জমিসহ ঘরের মালিকানা হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট পান্না আক্তার বলেন, আজ তিন উপজেলায় পৃথকভাবে স্যাররা উপস্থিত থাকবেন। স্ব স্ব উপজেলায় আলাদা আয়োজন থাকবে। এতে উপজেলার সকল শ্রেণির নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তবে সরকারের ভূমিহীন ও গৃহহীন এটা চলমান প্রকল্প বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে ৫ম পর্যায়ে ৩৮৮ ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ৮১টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয় এবং ওই পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হয়। আগামী ১১ জুন আরও ২৩৪ টি পরিবারকে (চন্দনাইশ-১৫৫টি, মীরসরাই-৩৪টি, সীতাকুণ্ড-৪৫টি) ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে মীরসরাই উপজেলার জন্য নতুনভাবে ৭৩টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার নির্মাণকাজ সমাপ্তির পর্যায়ে। এছাড়াও জরাজীর্ণ ব্যারাকের স্থলে একক ঘর নির্মাণের জন্য ১১৬টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
এর আগে চট্টগ্রাম জেলায় ১ম পর্যায়ে ১ হাজার ৪৪৪টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্মাণ শেষে ১ হাজার ৪৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। ২য় পর্যায়ে ৬৪৯টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ৬৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে ১ হাজার ৯৬২টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ১৯৬২টি পরিবারকে, ৪র্থ পর্যায়ে ১ হাজার ২২৩টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ১ হাজার ২২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত এসব ঘর নির্মাণ শেষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঠাঁই হয়েছে। তাছাড়া সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্মাণাধীন চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প ভূমিহীন-গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ-বাহিনী। সন্দ্বীপে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন। ওই প্রকল্পে ৯২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
মন্তব্য করুন