প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই উভয়ের পরিপূরক। প্রকৃতি ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি মানুষ ছাড়াও প্রকৃতি বাঁচে না। এ যেন অনেকটা মিলে গেছে চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এমাদ উদ্দিন চৌধুরী বিটুর সঙ্গে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী হলেও মননে একজন প্রকৃতিপ্রেমী। তাই তো শখের বসে ঘরের ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। ১৫০০ বর্গফুট এই ছাদের মধ্যে রোপণ করেছেন শতাধিক ফলজ গাছ। এসবের মধ্যে রয়েছে ৫৫ জাতের আঙুর গাছ। যে গাছগুলোর মধ্যে থোকায় থোকায় দুলছে বাহারি রঙের আঙুর। সাধারণ মানুষের ধারণা, আঙুর বিদেশি ফল। এই ফল বিদেশের মাটিতেই জন্মায়। দেশের মাটিতে জন্মালেও টক হয়। কিন্তু বিটুর ছাদ বাগানের আঙ্গুরগুলো স্বাদে ও মিষ্টিতে অতুলনীয়। তাই তো প্রতিদিন এই ছাদ বাগান দেখতে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। কিন্তু তিনি এই আঙুর বিক্রি করেন না। ঘরের চাহিদামতো রেখে বাকি সবগুলো সে পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে উপহার হিসেবে বিলিয়ে দেয়। বিটু চৌধুরীর ছাদ বাগানে প্রায় শতাধিক ফলজ গাছ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি গাছে রয়েছে জাতে ভিন্নতা। এসব ফল গাছের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫৫ প্রজাতির আঙুর। সেগুলো হলো বাইকুনুর, আত্তিকা, প্লামিনকো, ডিক্সন, ডাশুনিয়া, গুরি, গ্রিন লং, লোরাস, অ্যাকাডেমিক, ট্রান্সফিগারেশন, দোভস্কী পিংক, ফ্লেম সিডলেস, লিচি ফ্লেভারসহ বিভিন্ন জাতের আঙুর গাছ। এইসব বীজ তিনি অনলাইন থেকে সংগ্রহ করলেও কিছু কিছু বীজ আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে আমেরিকা থেকে আনিয়েছেন। তাহার ছাদ বাগানে বাগানে আঙুর ছাড়াও রয়েছে ,আনার গাছ, আম, ড্রাগন, ত্বীন, বারোমাসি আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। এ বিষয়ে বিটু চৌধুরী বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার প্রকৃতি ভালো লাগে যদিও আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি যেটুকু সময় অবসরে থাকি সবটুকু সময় বাগানে মধ্যে দিয়ে থাকি। আঙ্গুরসহ বিভিন্ন জাতের বীজগুলো আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে আমেরিকা ও অনলাইনের মাধ্যমে নিয়ে আসি। ছাদ বাগানের কারণে একদিকে বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটছে, অন্যদিকে তীব্র গরমের মধ্যে পুরো ঘরকে শীতল করে রাখে। তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে যেসব ফলগুলো আমরা নিজেদের পুষ্টি চাহিদার জন্য নিয়ে আসি তার মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত ফরমালিন। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়াও বিটু চৌধুরী আরও বলেন, যাদের ঘর-দালান রয়েছে তাদের ঘরের ছাদটি যেন খালি না রাখেন। ছাদের উপর শুধু ফলের বাগান নয়, আপনি চাইলে সবজিও চাষাবাদ করতে পারেন। পর্যায়ক্রমে আঙুর চাষকে ব্যবসায়ী চিন্তাধারা ও বৃহত্তর পরিসরে করার ইচ্ছা আছে তার। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যে অনেকগুলো ছাদ বাগান রয়েছে। তার মধ্যে ব্যতিক্রম এমাদ উদ্দীন চৌধুরী বিটুর ছাদ বাগান। তার ছাদ বাগানের মধ্যে যেসব ফল রয়েছে সবগুলোই বিদেশি ফল। মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ৫৫ জাতের আঙ্গুরের চাষ করছেন তিনি এবং প্রতিটি জাতের আঙুর গাছ থেকে থোকায় থোকায় ফলন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ছাদ বাগানের কারণে বিটু চৌধুরী একদিকে যেমন পুষ্টিকর ফল পাচ্ছেন, অন্যদিকে তীব্র গরমে ছাদের ভ্যাপসা গরম থেকে শীতল থাকছে ঘরও।