নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামের ২৬ পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস, ধসের শঙ্কা

চট্টগ্রামের রাসমনি ঘাটের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ঘুরে দেখছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রামের রাসমনি ঘাটের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ঘুরে দেখছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। ছবি : কালবেলা

একদিকে প্রচণ্ড বাতাস, অন্যদিকে দুই দিনের টানা বৃষ্টি। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো ভারি, এতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। মানুষের ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি থমকে গেছে জনজীবনও। এমন পরিস্থিতিতে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়। যেখানে ঝুঁকি নিয়েই বাস করেন প্রায় ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। বৃষ্টি কমলেও এসব পাহাড় এখন মরণ ফাঁদে রূপ নিয়েছে। ধসে পড়তে পারে যে কোনো মুহূর্তে। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে তাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে এসব পাহাড়ের বসবাসকারীদের কাছে বারবার যেতে দেখা গেছে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, চট্টগ্রামে বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলেই তৈরি হয় পাহাড় ধসের শঙ্কা। শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরানোর কাজ। পরিচালিত হয় উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু দুর্যোগ শেষ হলেই সবকিছু আবারও স্বাভাবিক হয়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতেই ফের শুরু হয় বসবাস।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোতে অবৈধভাবে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে রীতিমতো বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করেই দেওয়া হয় বিদ্যুৎ। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিটি সভায় সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে পাকাপোক্ত হয়ে বাস করেন অবৈধ বাসিন্দারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২৬টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে বাস করে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। ২৬ পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি সংস্থার ও ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। পাহাড়গুলো তদারকিতে আছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২০০৭ সালের জুন মাসে গঠিত এ কমিটি গত ১৭ বছরে ২৭টি সভা করেছে। সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৮ আগস্ট। প্রতিটি সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি। তাছাড়া সেবা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিষয়টা নিয়ে অবহেলা করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. আবদুল মালেক বলেন, গত শনিবার থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধভাবে এবং ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ কার্যক্রমও চলমান।

সম্প্রতি আকমল আলী ঘাট, রাসমনি ঘাট, ১ নম্বর ঝিল সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। কালবেলাকে তিনি বলেন, আমরা এক হাজারের অধিক আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আশ্রয় নেওয়া জনগণ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন এর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আকমল আলী ঘাটের জেলেপল্লীতে বসবাসকারী আড়াই হাজারের পরিবারের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার পরিবারকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া লালখান বাজার এলাকার বাটালি হিলে, বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা, কুসুমবাগ এলাকা, ফিরোজশাহ কলোনি, আমিন কলোনিসহ বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় আমরা সব সময় জিরো টলারেন্সে রয়েছি। আমরা চাই না কারও বিন্দু মাত্র ক্ষতি হোক।

জানা যায়, ২০০৭ সালে এক দিনেই পাহাড় ধসে নারী, শিশুসহ মারা যান ১২৭ জন। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় চার পরিবারের ১২ জনের। ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে মারা যান ১৭ জন। ২০১২ সালের ২৬-২৭ জুনে মারা যান ২৪ জন। ২০১৩ সালে মতিঝর্ণায় দেয়াল ধসে মারা যান দুজন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে মারা যান তিনজন, একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ কলোনিতে মারা যান চারজন। ২০১৯ সালে কুসুমবাগ এলাকায় মৃত্যু হয় এক শিশুর। ২০২২ সালের ১৮ জুন মৃত্যু হয় চারজনের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নোয়াখালীতে দখলমুক্ত ফুটপাত, ব্যবসায়ীদের জরিমানা

একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুজেয় শ্যাম আর নেই

ছিলেন জন্মগত বয়রা, গ্রেনেড হামলার ভুক্তভোগী সেজে ‘আওয়ামী গডফাদার’

গাজার যোদ্ধাদের প্রধান নিহত, যা বলছে পশ্চিমা বিশ্ব

ত্রাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ যুবদলকর্মীর বিরুদ্ধে

মন খারাপ হলেই বিল্লাল দখলে নিতেন অন্যের সম্পদ

কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার

খাতা না দেখেই মনগড়া রেজাল্ট দিয়েছে, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

দেশের ৬ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

চিলমারীতে নদীতে ৫০০ হেক্টর জমি, নিঃস্ব ৩০০ পরিবার

১০

বায়তুল মোকাররম মসজিদে নতুন খতিব নিযুক্ত 

১১

১৮ অক্টোবর : ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১২

১৮ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি

১৩

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১৪

বেরোবিতে ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

১৫

ধর্মপাশায় কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১৬

‘পারকি সৈকতকে আকর্ষণীয় করতে মাস্টারপ্লান নেওয়া হবে’

১৭

বগুড়ায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৩  

১৮

দেবিদ্বারে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

১৯

কুলাউড়া ছাত্রলীগ সভাপতি তায়েফ কারাগারে

২০
X