ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা। চট্টগ্রাম নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে একে একে যাত্রা শুরু করে গাড়ির বহর। উদ্দেশ্য টুঙ্গিপাড়া, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি। একে তো সিডিএ’র দায়িত্বে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। পাশাপাশি প্রথমবার সবাই যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে। এই দুই কারণে যাত্রার শুরুতে বহরে থাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। কিন্তু যাত্রা শেষে ফিরে এলো এক রাশ হতাশা নিয়ে।
কেননা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া-মিলাদ কেন্দ্র করে যে আয়োজন, সেসব আয়োজনে সিডিএর কয়েকজন শীর্ষ প্রকৌশলীকে দেখা যায়নি। বরং তারা ছুটে গেছেন পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে। সেখানে করেছেন বারবিকিউ পার্টি। শুক্রবার (১৭ মে) টুঙ্গিপাড়ায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে চট্টগ্রামে। আলোচিত চার প্রকৌশলী জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পেলেও গত ১৫ বছর ধরেই আছেন সিডিএ’র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে বারবিকিউ পার্টির আয়োজনের ছবি ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড দিয়ে তারা বিতর্কের ফাঁদে পড়েছেন। ওই পার্টিতে অংশ নেওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কানেকশনের অভিযোগ রয়েছে।
আলোচনায় আসা সিডিএ’র এসব কর্মকর্তারা হলেন- মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন, সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার-১ প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান, নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মোহাম্মদ শামীম ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ। তাদের মূল পদবি সহকারী প্রকৌশলী হলেও তারা কীভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন এসব নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই।
মূলত, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া সিডিএ’র কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘিরেই এই পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যাওয়ার নামে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে আলোচনা সভা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস কিংবা খাবার টেবিলে তাদের উদ্ভট কাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে এ সমালোচনা। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে জেয়ারতের পর ফটোসেশন শেষে উধাও হয়ে যান তারা। এরপর দুপুরের পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও কর্মকর্তাদের আর দেখা পায়নি কেউ। সবশেষ বিকেলের দিকে তাদের যার যার প্রোফাইলে ভেসে ওঠে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে প্রমোদ ভ্রমণের ছবি। কিন্তু এর আগে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফটোসেশনের পালা শেষে সেই ছবি আপলোড দেননি কেউ। পরে এ নিয়ে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মাইনুদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ছিলাম। ফুলও দিয়েছি, মোনাজাতেও অংশগ্রহণ করেছি। জুমার নামাজ অন্য একটি মসজিদে পড়েছি। এরপর দুপুরের আগেই অন্য একটি কাজ থাকায় বরিশালে চলে গিয়েছি। তবে আমাদের একটি টিম টুঙ্গিপাড়ায় ছিল।’
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের ছবি ফেসবুকে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওইখানেও একটু গিয়েছিলাম।’
সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ কালবেলাকে বলেন, ‘সুন্দর একটি আয়োজন হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা, জিয়ারত ও মোনাজাত করেছি। দুপুরের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও আলোচনা সভাও করেছি। পাশাপাশি সকলের খাবারের আয়োজনও করেছি। যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করি, আগামীতেও আমরা সকলের সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের অঙ্গীকারে এগিয়ে যাব।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ১০টি বাস, ১০টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। পরে সেগুলো শুক্রবার সকালে গিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছায়। দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়, করা হয় মোনাজাত। এরপরই উধাও হয়ে যান সিডিএ’র কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানজুড়ে সব আয়োজন একাই সামলিয়েছেন সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। সঙ্গে ছিলেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। সিডিএর এসব প্রকৌশলীরা অনুপস্থিত থাকায় দুপুরের দিকে খাবারের টেবিল তদারকিতে নেমে পড়েন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দোয়া, মিলাদ ও আলোচনা সভাতেও দেখা যায়নি সিডিএ’র ওই পাঁচ প্রকৌশলীকে। এসব নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা সিডিএ’র স্টাফরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন। অনেকেই তাদের ‘দলছুট’ বলে মন্তব্য করেন।
উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা মন্তব্য করেন, এসব কর্মকর্তা জোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। তারা যে এখানে এসেছে এটাই বেশি। একইভাবে বিএনপি-জামায়াত কানেকশনের অভিযোগ রয়েছে। এসব তদন্তের জোর দাবি জানান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন