জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৫ দিন পর অবশেষে চট্টগ্রামে ফিরলেন ২৩ নাবিক। এর মধ্য দিয়ে নাবিকদের স্বজন-পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। তাদের বরণ করতে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এ সময় প্রিয় মানুষটির জন্য অনেকেই নিয়ে আসেন পছন্দের খাবার- আবার কেউ কেউ খুশিতে ঝরান চোখের জল।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩।
এ সময় নাবিকদের বরণ করে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। বন্দরে পৌঁছার পর সেখানে উপস্থিত সবার প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তারা।
এক নাবিক বলেন, বন্দি অবস্থায় শুরু থেকে আমাদের জীবন নিয়ে টানাটানি ছিল। আমরা সেখান থেকে বেঁচে ফিরব কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। আসলে একবার জিম্মি হয়ে গেলে ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
আরেক নাবিক বলেন, কী পরিমাণ এক্সাইটেড আমরা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা যখন ওই সিচুয়েশনে পড়েছি, তখন ভাবতে পারিনি, দেশে ফিরতে পারব। এখন ফিরলাম।
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদ বলেন, জিম্মিদশায় থাকা অবস্থায় ৩৩ দিন মনে হচ্ছিল বছরের বেশি। কবে ফিরব বুঝতে পারছিলাম না। একটু আশা দেখি, আবার নিভে যায়। আজকের মুহূর্তের জন্যই সারাটাক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।
নাবিকরা জানান, পূর্বের কোনো দিন আর তারা মনে করতে চান না। আজকের দিন খুব আনন্দের। এই দিনে তারা পূর্বের দিনগুলো মনে করতে চান না।
জাহাজটির নাবিক মো. নুরুদ্দীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে এসেছে তাদের আড়াই বছর বয়সী একমাত্র সন্তান সাদ বিন নুর। নাবিক সালেহ আহমেদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমার স্বামী ফিরেছেন। এজন্য তাকে বরণ করতে এসেছি। আজকের দিনটি আমার খুব ভালো লাগছে।
২৩ নাবিকের একজন স্টুয়ার্ড পদে কর্মরত মো. নুরু উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন দক্ষিণ শাহ মীরপুর এলাকার বাসিন্দা। তার জন্য নিজ হাতে কেক তৈরি করে এনেছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। একটির ওজন তিন পাউন্ড, অপরটি দেড় পাউন্ড। তিন পাউন্ডের কেকটিতে জাহাজের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘ওয়েলকাম ব্যাক’।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আজ কেমন লাগছে তা বলে প্রকাশ করতে পারব না। তার পছন্দের সব খাবার রান্না করা হচ্ছে। তিনি কেক পছন্দ করেন। আমি তার জন্য সাড়ে চার পাউন্ডের দুটি চকোলেট কেক তৈরি করেছি।
নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, ছেলে অবশেষে ঘরে ফিরতে পারছে, এর চেয়ে বড় সুখবর আর নেই। আমরা সবাই খুশি। এই খুশির মাত্রা বলে বোঝানো যাবে না।
উদ্ধার হওয়া ২৩ নাবিক হচ্ছেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।
মন্তব্য করুন