ট্রেন চলাচলে যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত এবং ট্রেনে করে মাদক পাচারসহ নানাবিধ অনিয়মে রেল প্রশাসন সবসময় জিরো টলারেন্স উল্লেখ করেছেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার শাহাদাত আলী। তিনি বলেছেন, মাদক পাচার, ট্রেনে পাথর ছোড়া, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা বিষয়ে রেলওয়ের কোনো স্টাফ জড়িত থাকলে তদন্তপূর্বক আইনভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে একান্ত সাক্ষাৎকারে কালবেলাকে এসব কথা বলেছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার শাহাদাত আলী।
এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চালুর বিষয়টি রেলওয়ের এক নম্বর প্রায়োরিটিতে রয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন দিতে হবে। এটা এক নম্বর প্রায়োরিটি। এই রুটে ট্রেন চালুর ডিমান্ডে আমাদের কোনো না নেই।
‘মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি আমরা। ইতোমধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার রুটে ট্রেন চলাচলে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপ বন্ধে কঠোর অবস্থান ও সতর্কতা, মাদকসহ অবৈধ কিছু পাচার করতে না পারে সে জন্য কক্সবাজার স্টেশনে চেকিং মেশিন বসানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যও এই প্রকল্পের দায়িত্বশীলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু কক্সবাজার ট্রেন নয়, সকল ট্রেন চলাচলে যাত্রীসেবার মান নিশ্চিতসহ কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।’
রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম চট্টগ্রাম এসেছেন জানিয়ে সরদার সাহাদাত আলী বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর দাবি বিবেচনায় নিয়েই টাইম-টেবিলে দুটি ট্রেন রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। দৈনিক কত যাত্রী যায়, আমরা কয়টা ট্রেন চালাতে পারি-এসব। আমরা জানি এই রুটে ট্রেন চালু হলে মানুষের কষ্ট কম হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। সমস্যা হচ্ছে জনবল ও ইঞ্জিন সংকট।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালাতে পারব। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন কম চালাতে হবে। কারণ হচ্ছে আমার ইঞ্জিন আছে, বগি আছে, কিন্তু ড্রাইভার নেই। আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, কিন্তু অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে প্যানেল সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। চুক্তিতেও পুরোনো লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
কালুরঘাট সেতুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়ে রেলওয়ের ডিজি আরও বলেন, সম্প্রতি আমরা দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেতুর জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে। জিওবি ফান্ড ৪ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা দেবে দাতা সংস্থা। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক কথা দিয়েছে। তারা আগামী জুনে সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি করতে চায়। এটি হয়ে গেলে আমরা কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করব।
তিনি বলেন, নানা কারণে সমন্বয়টা অনেক ক্ষেত্রে হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, আমরা অবকাঠামো এবং রোলিং স্টক নিয়ে কাজ করি। দুটো কাজ যখন সমান্তরালভাবে হয় না, দুটোর মধ্যে যখন গ্যাপ থেকে যায়, তখন সমস্যা হয়। দেখা যায়, আমার লাইনগুলো চালাতে পারছি না।
সবমিলিয়ে বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তেমন কোনো রেলওয়ের দোষ নেই জানিয়ে সংস্থাটির এই মহাপরিচালক আরও বলেন, আমাদের প্রকল্পগুলো কিন্তু প্রায় বিদেশি দাতা গোষ্ঠীর ফান্ডিংয়ে হয়। দেখা গেল অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ফান্ডিং পেলাম- কিন্তু রোলিং স্টকে পেলাম না। তখন সমস্যাটা হয়। তবে আমরা কাজ করছি। রানিং প্রজেক্টগুলো শেষ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।
মন্তব্য করুন