মদ বিক্রেতাদের হামলায় আহত হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছেন শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। শুধু প্রতিমা ভাঙচুর নয়, তার হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন শহীদুল। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় এমন হামলা চালিয়েছেন শহীদুল ইসলামসহ একটি চক্র।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা খাগরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড জলদাসপাড়া শ্রীশ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে বাসন্তী পূজার আরতি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন ওই এলাকার সহদেব জলদাসের স্ত্রী কৃষ্ণা জলদাস (৩২), অর্জুন জলদাসের ছেলে সুজন জলদাস (২৫) ও তার ভাই শিপন জলদাস (১৭)।
শ্রীশ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি কৃষ্ণা জলদাস বলেন, শহীদুল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের কয়েকজন লোকের কথাকাটাকাটি হয়। সেই ঘটনার জের ধরে শহীদ তার বাহিনী নিয়ে আমাদের মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে আমাদের ওপর হামলা করে।
খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, জলদাশ পাড়ার একটি অংশে নিয়মিত মদ বিক্রি হয়। এলাকাটি মূলত চন্দনাইশের বৈলতলীর সীমানাবর্তী। মন্দিরে যে পূজার অনুষ্ঠান আছে সেটি মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাদের অবহিত করেনি। পুলিশ প্রশাসনকেও অবহিত করা হয়নি। শহীদ নামের ছেলেটি মদ খাওয়ার জন্য জলদাশ পাড়া এলাকায় গেলে স্থানীয় মদ বিক্রেতাসহ কয়েকজন মিলে শহীদকে মারধর করে। পরে শহীদ মন্দিরে হামলা করেছে বলে শুনেছি। আমরা অভিযুক্ত শহীদকে খুঁজছি। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য সম্ভাব্য সব জায়গায় পুলিশি অভিযান চলছে। আশা করছি শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এখানে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ ঘটনায় রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এলাকার মানুষ বিষয়টিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্রোশ হিসেবে মূল্যায়ন করছে।
এদিকে সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বাসন্তী পূজায় হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অনতিবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, পারিবারিকভাবে প্রতিমা নিয়ে পূজোর কাজ চলছিল। মদ্যপান নিয়ে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে দুটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে একজনকে প্রধান করে অজ্ঞাতনামা অনেককে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, মূলত শহীদুল ইসলাম একজন চাঁদাবাজ প্রকৃতির লোক। সে প্রায় সময় মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা তোলেন। এই মন্দিরেও তিনি চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু মন্দিরের সংশ্লিষ্টরা তা দিতে অস্বীকার করায় তিনি তাদের ওপর হামলা চালান। ভাঙচুর করেন প্রতিমা। একজন নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করেন তিনি। এই ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যারা ওই মন্দিরের পুরোহিত কিংবা পূজা অর্চনা করেন তারা খুবই আতঙ্কিত। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের ইউএনও, থানার ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা চাই।
এদিকে উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ নেতা রাজিব ধর, রাজু দাম, টিটু তালুকদার, শুভাশীষ ভট্টাচার্যও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তারা বলেন, এমন ঘটনা এর আগে আর সাতকানিয়াবাসী দেখেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত এর ফলাফল না দেখতে পাব আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আশ্বস্ত হতে পারছি না।
এর আগে বিকেলে ঘটানাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকারসহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন