নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৩ এএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নাবিকদের ফিরাতে দস্যুদের সঙ্গে আলাপ চলছে, জানাল জাহাজ কর্তৃপক্ষ

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। ছবি : সংগৃহীত
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। ছবি : সংগৃহীত

সোমালিয়ায় অপহরণের শিকার এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ (কেএসআরএম)।

শনিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কেএসআরএমের শীর্ষ কর্মকর্তারা জিম্মি জাহাজটির ২৩ নাবিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় একসঙ্গে ইফতারও করেন সবাই। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কবির গ্রুপের (কেএসআরএম) মুখপাত্র ও গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের ‘এমভি জাহান মনি’ নামে আরেকটি জাহাজ হাইজ্যাক করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তাদের মুক্ত করতে একশ’ দিন সময় লেগেছিল। এবার আরও কম সময়ে এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস। আলোচনা চলছে।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা বলেন, শুক্রবার আমরা নাবিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবার নাবিকরা তাদের স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেছে। এসবই আলোচনার অংশ। বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না এখন।

এদিকে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ'য় চলছে পানি সংকট। যার কারণে দিনে মাত্র এক ঘণ্টাই পানি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন জিম্মি ২৩ নাবিক। পাশাপাশি জাহাজে থাকা খাবারে জলদস্যুরা ভাগ বসানোর কারণে দ্রুত কমছে খাবারও। তিন বেলা জলদস্যুরা খাবার খাওয়ার টেনশনে পড়েছে নাবিকরা।

এদিকে আশঙ্কা ছিল জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার তাপমাত্রা বেড়ে বিস্ফোরণের। বর্তমানে জিম্মি নাবিকরা রাটিন কাজ করার অনুমতি পাওয়ায় তাপমাত্রার বিষয়টি তদারকি করছেন। যে কারণে কমেছে কায়লা থেকে বিষ্ফোরণের শঙ্কা।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাবিকদের বলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা মিজানুল ইসলাম। জলদস্যুদের সঙ্গে নতুন করে কোনো যোগাযোগ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হলেও এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। দস্যুদের তরফ থেকে এখনো মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি।’

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার নাবিকদেরকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেয় জলদস্যুরা।

জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ছোটভাই আসিফ খান বলেন, ‘ভাইয়া ফোন করেছিলেন। ভাবির মোবাইলে ফোন করে মা ও আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জাহাজে থাকা জলদস্যুরা সব নাবিককে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে দিয়েছে বলে ভাইয়া আমাদের বলেছে। জাহাজে পানির সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। দিনে এক ঘণ্টা পানি ব্যবহার করতে দেয় তাদের।’

সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড উপকূলের কাছে এমভি আবদুল্লাহ নোঙর করে রাখা আছে। জাহাজটির অদূরে একটি বিদেশি যুদ্ধ জাহাজ টহল দেওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় নাবিকদের ব্রিজে নিয়ে রাখে বলে আতিক জানিয়েছেন।

জলদস্যুদের সঙ্গে নাবিকদের কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি উল্লেখ করে আসিফ খান বলেন, ‘ভাইয়ার অ্যালার্জির সমস্যা হলেও তিনি সুস্থ আছেন। অন্য নাবিকরাও সুস্থ আছেন।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। পরিবারের সঙ্গে জাহাজের একাধিক নাবিক যোগাযোগ করেছেন। নাবিকদের বিষয়ে জাহাজ মালিকের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বলেন, জাহাজটি আগের অবস্থানে আছে। অর্থাৎ তীর থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে নোঙর করেছে দস্যুরা। তবে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে জলদস্যুদের ওপর যৌথভাবে চাপ বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী।

তিনি বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিককে প্রস্তাব দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী। তবে এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশি সংস্থাগুলো বাংলাদেশি জাহাজে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না।

ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান আরও বলেন, ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ছাড়িয়ে আনতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাহাজের মালিক পক্ষ। সোমালিয়ার দস্যুদের ভাষা সোমালি এবং আরবি। এখন জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দস্যুদের ভাড়া করা ইংরেজি জানা এক লোক। সমঝোতা এখনও হয়নি। এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। সমঝোতা হওয়ার পর টাকা পাঠানো হবে। এরপর মুক্তি দেওয়া হবে।

এদিকে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের ‘দ্রুত’ উদ্ধারের বিষয়ে সরকার আশাবাদী বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদেরকে মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। এখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।

জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা রাখা হচ্ছে প্রশ্নে হাছান বলেন, জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে, কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যাতে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রবিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসনে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের বৈঠক

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

১০

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

১১

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১২

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১৩

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১৪

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৫

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৬

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

১৭

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

১৮

সংসদের মেয়াদ ৪ বছর চায় গণঅধিকার পরিষদ

১৯

আন্দোলনে হামলাকারী হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য মনিরুল গ্রেপ্তার

২০
X