পরীক্ষামূলক উৎপাদনে থাকা চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সেই কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রটি থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ আসতে আরও প্রায় ১৫ দিন বা দেড় সপ্তাহের মতো সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ।
চলমান সময়ে প্রচণ্ড গরমে তীব্র লোডশেডিংয়ের মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গল্লামারায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঘিরে নানা আশার আলো দেখাচ্ছিল সেই আলোই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্নভাবে। তবে স্টকে থাকা কয়লার প্রথম চালান শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের ক্রাইসিস থাকায় কয়েকদিন সাপোর্টও দিয়েছে বলে জানান পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী।
এ বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, তাদের স্টকে থাকা কয়লার প্রথম চালান শেষ হয়ে গেছে। ১৩ জুন আসার কথা ছিল, কিন্তু গতকাল জানিয়েছেন এ সময়ের মধ্যেও আসবে না। বিদ্যুতের ক্রাইসিস থাকায় কয়েক দিন সাপোর্ট দিয়েছিল। তবে ১৮ জুন নাগাদ কয়লার পরবর্তী চালান আসবে বলে শুনেছি। গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। তাতে চাহিদা কমায় লোডশেডিং পরিস্থিতি তুলনামূলক সহনীয় পর্যায়ে আছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে কম। তাই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের যাওয়া-আসার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কয়লা সংকটে পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন ২৪ মে এই কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। সেদিন ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটি। এর মধ্যে গত ৫ জুন পায়রার দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ হয়ে যায়। তাতে আরও অবনতি হয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির। এর দুই দিন পর এসএস পাওয়ার থেকে আসা ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতে কিছুটা সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি কয়লা না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আমরা এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাইনি। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুরোধে চালু করেছিলাম। কয়লা এলে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। তবে বিদ্যুৎ আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান তারা।
এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের উপ-প্রকল্প পরিচালক ফয়জুর রহমান জানিয়েছিলেন, কয়লার প্রাপ্যতা অনুসারে এক নম্বর ইউনিটটি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। একই সক্ষমতাসম্পন্ন দুই নম্বর ইউনিটের কমিশনিং কার্যক্রম চলছে।
অন্যদিকে পিডিবির ওয়েবসাইটে শুক্রবার পিক আওয়ারে দিনে সম্ভাব্য চাহিদা দেখানো হয়েছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দেখানো হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। কর্মদিবসে এই সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট উঠে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৬৭৭ মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৬৫৫ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে ইউনিট সংখ্যা দুটি। এর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ। বাণিজ্যিক উৎপাদন পুরোদমে শুরু হলে ইউনিট দুটি থেকে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেড বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি, যার বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানির ৭০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশের এস আলম গ্রুপের এবং বাকি ৩০ শতাংশ চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রির। এটিই বেসরকারি খাতে দেশে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র।
মন্তব্য করুন