প্রতিদিনই নানা কৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করার চ্যালেঞ্জ হাতে নিচ্ছে চট্টগ্রামের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। নারী, বৃদ্ধ, যুবক-যুবতীর পাশাপাশি সব ধরনের ভোটারদের নির্বাচনের দিন কীভাবে নিজের আওতায় আনা যায় তার চেষ্টায় প্রার্থীরা। প্রতিদিন যাচ্ছেন ঘরে ঘরে, পরিবর্তন করছেন ভোট চাওয়ার উপস্থাপনা কৌশল। জয় করার চেষ্টা করছেন ভোটারের মন।
চট্টগ্রাম নগরের বারেকবিল্ডিং এলাকায় বয়বৃদ্ধ জুয়েল দাশ। বাড়ির আঙিনায় সকালবেলা বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল তার কাছে এসেছিলেন কয়েকজন প্রার্থী। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কালবেলাকে বলেন, আমাকে খুব অনুরোধ করে বলেন- আমি যেন আমার পরিবার নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাই।
শুধু জুয়েল দাশ নয়, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের চিত্র এমনই। প্রতিটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিরা শক্তিশালী হয়ে উঠায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। তাই এমন কৌশল বলে জানাচ্ছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার এলজিইডি মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলার প্রার্থীরা। সেই অনুষ্ঠান শেষ হয় দুপুর একটায়। মূলত এরপরই বিকেল থেকে প্রচার-প্রচারণায় বেড়িয়ে পড়েন তার।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কথা বলেন তিনি। হাত মেলান, কৌশল বিনিময় করেন নবীন-প্রবীণসহ সব শ্রেণির মানুষের সাথে। এ আসনে মোট প্রার্থী আছেন সাতজন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী) আসনের মোট প্রার্থী আছেন ৯ জন। কারও থেকে কেউ কম শক্তিশালী নয়। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। যাচ্ছেন বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রতিদিনই নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। অন্যদিকে ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে। মনজুর আলম বলেন, আমি সফল হলে আমার নির্বাচনী এলাকাকে উন্নয়নে মডেল এলাকায় পরিণত করব।
অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি জানান, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। তার প্রতীক কেটলি।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ। তিনি নিজ নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি জানান তিনি। এম এ লতিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেই সবার উন্নয়ন হবে।
এদিকে ভিন্ন কৌশলে পথ আগাচ্ছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিটি এলাকায় ঘুরছেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দিন, আমি আগেও আপনাদের নিরাস করিনি। সামনেও করব না।
অন্যদিকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী দলটির মহাসচিব আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইরও চালাচ্ছেন প্রচারণা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ওই আসনের মোট প্রার্থী আটজন। প্রতিজনেই চেষ্টা করছেন প্রতিদিন, ব্যবহার করছেন নিত্যনতুন কৌশল। ভোটারের মন জয় করার লড়াইয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রত্যেকেই।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের এক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্ভার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন ছয়জন। প্রত্যেকেই চেষ্টা করছেন, মাঠের লড়াইয়ে ফল নিয়ে বাড়ি ফিরতে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী নৌকা প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার চৌধুরী বরাদ্দ পেয়েছে ট্রাক প্রতীক। এই আসনে মোট আটজন প্রার্থী রয়েছেন। প্রত্যেকেই কাজ করছেন মাঠে, চেষ্টা করছেন জয়লাভের।
মন্তব্য করুন