রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১
মোহাম্মদ যায়েদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে পাহাড়ের বোবা কান্না শুনছে না কেউ

চট্টগ্রামে লোহাগাড়ার লম্বা শিয়ার পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে অবাধে। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রামে লোহাগাড়ার লম্বা শিয়ার পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে অবাধে। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় চুনতি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাতগড় লম্বা শিয়ার পাহাড়ের মুখ এলাকায় সংরক্ষিত বন বিভাগের জায়গায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে, বালু জব্দ করে, পুণরায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে। বালু উত্তোলনকারীরা শ্যালু মেশিন বসিয়ে বালু তুলে নিলাম দেওয়া বালুর উপর পুণরায় বালু জমা করছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বালু নিলাম নেওয়া ব্যক্তি ও উত্তোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা যোগসাজস রয়েছে। কারণ বালু উত্তোলনকারীরাই তাদের উত্তোলনকৃত বালুগুলো বারবার নিলাম নিযে থাকে।প্রশাসনও তাদের সুযোগ দেওযার জন্য মাস দেড়েক পরে একবার অভিযান চালিয়ে আসে। স্থানীয়রা আরও বলেন, নিয়ম মোতাবেক প্রতি ঘনফুট বালুর মূল্য ২০ টাকা হয়। অথচ প্রশাসন নিলাম দিয়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা, কোনো সময় আবার ৫ থেকে ৬ টাকাও দিয়েছে। তারা বলেন নিলামকারীর সাথে প্রশাসনের কর্মকর্তারা গোপন আঁতাত করে এসব কাণ্ড চালাচ্ছে

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সম্পদ,যা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ওই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল। তবে অন্যায়ভাবে পাহাড় কাটার ফলে তাদের আবাসস্থল নষ্টের সাথে দেখা দিয়েছে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট। ফলে মাঝেমধ্যে বন্য হাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে এসে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। এ ছাড়া ফসলের ক্ষতিসহ মানুষের প্রাণহানী ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এসব এলাকার লোকজন চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট ও পদুয়া রেঞ্জর ডলু বনবিটের আওতাধীন ঘোড়ামারা, করিম্মাকাটা, বদারবর ঘোনা, সাইটতালা ও লম্বাশিয়া এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ের ছড়ায় আনুমানিক ২০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ৩০টির মত পাহাড় ইতোমধ্যে বালুখেকোরা সাবাড় করে দিয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য নির্ধারিত এসব পাহাড় বিলীন হয়ে যাওয়াই নিয়মিত চলার পথ হারিয়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

প্রসঙ্গত গত বছরের চলতি মাসের ২৬ তারিখে বালুখেকোদের বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখানে একটি হাতি শাবক গর্তে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বালু উত্তোলন করার ফলে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় হাতির দল নিয়মিত বিচরণ করে। গত বছর চলতি মাসে একটি হাতি বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে পড়ে মারাও গেছে। আর মাত্রাতিরিক্ত বালু পরিবহনের গাড়ি চলাচলের ফলে সড়কের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে আমাদের চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ধুলোবালি সারা শরীরে এমনকি নাকের ভিতর ঢুকে যায়, যা পরবর্তীতে শ্বাস কষ্ট হয়। এই পাহাড় নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ঝুকির মধ্যে, যা পরিবেশ প্রকৃতির জন্য এক মহাবিপদ সংকেত। এভাবে দিন কিংবা বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। তারা আরও জানান, বেশ কয়েকদিন আগে অভিযানে বিপুল পরিমাণ বালু জব্দ করা হলেও আবার শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশবাদী কর্মী ও শিক্ষক সানজিদা রহমান বলেন, বালু উত্তোলন এখানকার একটি নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ এইটা ধরে নিয়েছে বা এটা শিক্ষার অভাব বা সচেতনতার অভাব হতে পারে। এই বালু উত্তোলন একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে, আমি প্রায় দেড় বছর যাবৎ পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি, এখানে দেখা যাচ্ছে অবৈধ বালু যখন প্রশাসন এসে জব্দ করে নিলামে, বিক্রি করে দেয়, তখন ওই সিন্ডিকেটরা কিনে নেয়। কিন্তু যে পরিমাণ বালু জব্দ করে সে পরিমাণ বালু থেকেই থাকে। প্রতিদিন দেড়শো থেকে ২০০ ট্রাক করে বালি নেওয়ার পরও কমে না। স্যালো মেশিন দিয়ে পাহাড় কেটে বালু উঠাতে থাকে, কাজেই নিলাম কোনো সমাধান না। যে পরিমাণ বালু সিন্ডিকেটরা বের করছে প্রশাসনের সাহায্যে সে পরিমাণ বালু ওই স্থানে ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর অর্থদণ্ড কিংবা অন্যান্য আইনি দণ্ডে দণ্ডিত করতে হবে এবং দুর্গম পাহাড় কেটে যে রাস্তা করছে তা বন্ধ করে সিলগালা করে দিতে হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুন লায়েল বলেন, জব্দকৃত বালি নিলামে দেওয়ার পর নতুন করে বালু উঠানোর কোনো সুযোগ নেই। লম্বা শিয়াসহ অন্যান্য পাহাড় কাটা বন্ধের ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে আলোচনা করে একটা স্থায়ী পদক্ষেপ নেব। এই অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটি কিংবা বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিও পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। সেখান থেকে উত্তরণের সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুনতি রেঞ্জাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে যাচাই করে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড় ও পাহাড়ের ভেতর চলমান ছড়া থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালি তোলা হলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর। তাই কাউকে পাহাড় ও বনের ভেতর চলমান ছড়া থেকে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয় না। যারা এসব করছেন অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রবিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসনে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের বৈঠক

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

১০

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

১১

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১২

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১৩

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১৪

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৫

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৬

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

১৭

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

১৮

সংসদের মেয়াদ ৪ বছর চায় গণঅধিকার পরিষদ

১৯

আন্দোলনে হামলাকারী হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য মনিরুল গ্রেপ্তার

২০
X