বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন চট্টগ্রামের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসির ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা চারটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পুরো ঘটনার জন্য চুক্তি হয় চার লাখ টাকা। এ ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
তাদের দাবি, বিআরটিসি বাসের ইজারা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অগ্নিকাণ্ডের দায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চাপাতে চেয়েছিলেন বলেও পুলিশের অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাসের ইজারা নিয়ে বিআরটিসি ডিপো এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগে দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত দিদারুল আলম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি।
জানা গেছে, নগরীর অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় ছয় একর জায়গার ওপর বিআরটিসি ডিপো অবস্থিত। গত বছরের ২০ জুলাই রাতে বিআরটিসি ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা চারটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে একটি বাসের ১৬টি আসন এবং আরেকটির ৮টি আসন পুড়ে গেছে। বাকি দুটি বাস আংশিক পুড়ে যায়। এতে মোট ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ ঘটনায় বিআরটিসি ডিপো চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন। ঘটনার দুই দিন পর ২২ জুলাই পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে লেগুনাচালক সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও চিত্র, আসামির জবানবন্দি ও তদন্ত শেষে সম্প্রতি অভিযোগপত্রটি আদালতে দেওয়া হয়।
বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে ডিপোর বাসগুলোতে সুপারভাইজার দেওয়াসহ নানা বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন দিদারুল। ইজারা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি লোক ভাড়া করে বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিআরটিসি বাস ডিপোতে থাকা বাসগুলোর ইজারা চেয়ে পাননি শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম। এর আগেও বাসের ইজারা নিয়ে ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিআরটিসি ডিপো এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বিআরটিসি বাসে সুপারভাইজার দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে হালিম নামেও একজনকে খুন করা হয়।
গত বছরের জুলাইয়ে সারা দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, সেই সময়কে বেছে নেন দিদারুল। তার পূর্বপরিচিত লেগুনাচালক সোহেল রানাকে ঘটনার দুই দিন আগে বিআরটিসি ডিপো এলাকার সামনে ডেকে আনেন। তাকে বলেন, ডিপোর ভেতরে থাকা পাঁচটি বাসে আগুন লাগিয়ে দিতে হবে। এ জন্য তাকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে। তবে অগ্রিম হিসেবে তেল কিনতে তাকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।
সোহেল বাস ডিপোর পাশের একটি চা-দোকান থেকে একটি গ্যাস লাইটার চুরি করেন। পরে ঘটনার দিন ২০ জুলাই রাতে দেয়াল টপকে ডিপোতে ঢোকেন। একটি বাসের ভেতর থেকে ব্রেক অয়েল নেন। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চারটি বাসের আসনের ফোমে ব্রেক অয়েল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সোহেল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র নাথ বলেন, দিদারুল লোক ভাড়া করে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন, যাতে দোষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে চাপে।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, হাটহাজারী থানা-পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গ্রহণ ও শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম ও তার সহযোগী লেগুনাচালক সোহেল রানাকে। তারা দুজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ১৫ জনকে সাক্ষী রাখা হয়।
মন্তব্য করুন