গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে মাথায় টুপি দিয়ে সনদপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীরই। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই স্বপ্ন নিয়মিত বিরতিতে পূরণ হয়ে আসছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই স্বপ্ন বছরের পর বছর অধরাই থেকে যায়। তবে দীর্ঘ ৯ বছর পর আবারও সেই স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির পঞ্চম সমাবর্তন। এতে অংশ নেবে ৯টি অনুষদের ২২ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী। দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই সমাবর্তন ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তনে তাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার। সমাবর্তন সফল করতে ১৯টি উপকমিটি করা হয়েছে। সমাবর্তনের মূল আয়োজনে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২৫ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে।
সমাবর্তন আয়োজন কমিটি সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম সমাবর্তনে প্রায় ১৩ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে এসেছে। বাকি টাকা ইউজিসি ও স্পন্সর থেকে ব্যবস্থা করা হবে।
কোন অনুষদের কতজন শিক্ষার্থী ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারাই সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন। সমাবর্তনে অংশ নিতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ৪ হাজার ৯৮৭ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ২ হাজার ৭৬৭, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৪ হাজার ৫৯৬, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪ হাজার ১৫৮, জীববিজ্ঞান অনুষদের ১ হাজার ৬৮৯, আইন অনুষদের ৭০৩, প্রকৌশল অনুষদের ৭৯৮, মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ২৮৪, শিক্ষা অনুষদের ৩১৬ ও চিকিৎসা অনুষদের ২ হাজার ২৯৯ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেনের সময়সূচি বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি শহর থেকে ১০০টি বাসেরও ব্যবস্থা থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এক নম্বর ফটকের আশপাশে জায়গা নির্ধারণ করা হবে। এক নম্বর ফটক থেকে শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে।
শিক্ষার্থীরা যে উপহার পাবেন সমাবর্তনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি করে মোবাইল ওয়ালেট, কোর্টপিন, কলম ও ব্যাগ দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কমিটি। শিক্ষার্থীরা উপহার, খাবার, গাউন ও টুপি নিজ নিজ বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। গাউন ও টুপি দুদিন আগ থেকে সরবরাহ করা হবে।
সমাবর্তনের লোগোতে জুলাই বিপ্লব ও সবুজ ক্যাম্পাস পঞ্চম সমাবর্তনের লোগোতে জুলাই বিপ্লব ও ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে। লোগোর দুপাশে সবুজ ঘেরা দিয়ে বোঝানো হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আর নিচে শহীদ আবু সাইদের প্রতিকৃতি দুই হাত সম্প্রসারিত করে দেওয়া হয়েছে, আর লাল রং দেওয়া হয়েছে বিপ্লবকে সমর্থন করার জন্য।
লক্ষাধিক মানুষের সমাগম এদিকে সমাবর্তন ঘিরে ওইদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি ও বর্তমান শিক্ষার্থী মিলে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে এত বিশাল সংখ্যক জনসমাগমের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা নিয়ে কিছুটা ভাবাচ্ছে আয়োজক কমিটিকে।
সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, পঞ্চম সমাবর্তন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে থাকবে। সমাবর্তন ঘিরে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখা যাচ্ছে। একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হতে যাচ্ছে। সমাবর্তন একজন শিক্ষার্থীর অধিকার। সমাবর্তন জট কাটাতে আমরা সর্বশেষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদেরও এবার সুযোগ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে নিয়মিত সমাবর্তন করতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দীন খান কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদ নিয়ে বাড়ি ফেরা প্রতিটি শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ৫৮ বছরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ৪ বার। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েই পঞ্চম সমাবর্তন আয়োজনের কাজ শুরু করি। সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে আসব। তিনি সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করব। সমাবর্তন সফল করতে রাতদিন এক করে কাজ করে যাচ্ছি। সফলভাবে সমাবর্তন শেষ করতে পারি, এজন্য সবার দোয়া চাই।
মন্তব্য করুন