চট্টগ্রামের রাউজানে একের পর এক প্রাণ ঝরছেই। গেল আট মাসে প্রায় ৯ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে উপজেলাটিতে। কিন্তু প্রশাসনের অভিযান নিয়ে এখনো সন্তুষ্ট হতে পারছে না স্থানীয়রা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
চার দিনের মাথায় দুই হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এসময় তিনি এসব অপরাধ দমনে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ‘দরজা বন্ধ’ করে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এসময় তিনি বলেছেন, ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া ও সাতকানিয়া এলাকা হলো পাহাড় ও সমতল সংমিশ্রণ। এখানকার সমস্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে ডিফারেন্ট। আমরা এ ব্যাপারে আলাপ করছি, এখানে সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। প্রকাশ্যে কেউ যদি করে থাকে আমি আপনাদের সামনে বলে গেলাম- প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া একটি আরাকান সংগঠনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ভিডিও ও টিকটক কনটেন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন দেখতে হবে আরাকান আর্মি ফাইট করছে অনেকদিন যাবৎ। এদের অনেকে এপারে বিয়ে করে ফেলছে- এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু যে হারে ভিডিওতে আসছে বিষয়টা তা নয়। টিকটক ভিডিও অনেকভাবে করা যায়। সবটা যে সত্য তা না, আবার সবটা যে মিথ্যা তাও না। এটার ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যালেন্স করতে হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, আরাকান ওই বর্ডারটা ডিফিকাল্ট বর্ডার। আমরা তো মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। কিন্তু বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। এখন মিয়ানমার থেকে কিছু আমদানি-রপ্তানি করতে হলে মিয়ানমার সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় আবার আরাকান আর্মিতে যারা আছে তারাও পয়সা নিচ্ছে। এখানে একটা সমস্যা আছে আপনাকে বুঝতে হবে। এটার সমাধানে চেষ্টা চলছে। আর সীমান্ত পুরাভাবে রক্ষিত আছে।
যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযান কোনো অবস্থায় কমেনি। বরং আপনাদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে ঘটনা ঘটে, সত্যি ঘটনা আপনারা অবশ্যই প্রকাশ করবেন। তখন আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু অনেক সময় আছে দুই একজন ঘটনা সত্যি নয় কিন্তু তা প্রকাশ করে দেয়। সেসময় ইনভেস্টিগেশন করে দেখা যায়- ঘটনা সত্যি নয়, তখন অসুবিধা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশের সাংবাদিকরা এর সুবিধাটা নেয়। যেহেতু জানেন যে তারা মিথ্যা সংবাদ বেশি পরিবেশন করে।
পাহাড় অশান্ত কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি পাহাড়ে তিনবার চাকরি করেছি। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলাম, সিও ছিলাম ও বিগ্রেড কমান্ডার ছিলাম। পাহাড়ে অশান্ত তো আপনারা দেখেনই। এখন ওই তুলনা করতে গেলে পাহাড় এখন পুরোটাই শান্ত। এই ছোটখাটো অপহরণ আমাদের প্লেইন ল্যান্ডেও (সমতল) তো হচ্ছে। খালি পাহাড়ে কেন দোষ দেন। পাহাড় আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছে, অনেক শান্ত আছে। আমি বাঘাইহাটে ছিলাম। সেখানে ল্যান্ডমাইন দিয়ে একসঙ্গে পিকআপ উড়িয়ে দিয়েছে। তিনজন, চারজন করে মারা গেছে। সেসময় এই খবরগুলো আসেও নাই, প্লাস ওই এলাকায় এক্সেসেবিলিটিও ছিল না। কিন্তু এখন তো পাহাড়ের অবস্থা এতো ভালো— আল্লাহ দিলে ওই রাস্তা দিয়ে আপনারা সাজেক চলে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন