চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দায়িত্ব নেওয়ার ৫ মাসের মাথায় বড় চমক দেখালেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছ থেকে আদায় করলেন পুরো পৌরকর। দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকরের বিপরীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে আসছিল মাত্র ৪৫ কোটি টাকা। এতে বছরে ১১৫ কোটি টাকা করে রাজস্ব বঞ্চিত হয় সিটি করপোরেশন। দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নির্ধারিত পৌরকরের পুরোটাই আদায়ের উদ্যোগ নেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামান মেয়রের কাছে ১০০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
জানা যায়, মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর পাওনা পরিশোধে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হন মেয়র। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি চসিককে আপাতত ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করার নির্দেশনা দিয়ে বন্দরের চেয়ারম্যানকে দাপ্তরিক পত্র দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনোই পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকরের পুরোটা পরিশোধ করেনি। সাবেক মেয়রদের অনেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হন। কেউ অজ্ঞাত কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ছাড়ও দেন। অবশেষে ৩০ বছর পর বর্তমান মেয়রের উদ্যোগে চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকরের প্রায় পুরোটায় পরিশোধ করল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই পৌরকর পাওয়ায় একদিকে চসিকের যেমন রাজস্ব বাড়ল, অন্যদিকে নিজস্ব ফান্ডের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি বাড়বে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন কালবেলাকে বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম করপোরেশনকে বন্দর পুরো পৌরকর পরিশোধ করল। অতীতে মেয়ররা চেষ্টা করেও এটা আদায় করতে পারেননি। বন্দর থেকে মোটা অঙ্কের পৌরকর পাওয়ায় আমাদের কর্মকাণ্ডে গতি বাড়বে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা যে বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দেই, সেটা আরও বাড়ানো যাবে। এতে দুটো খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। নগরীর সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সেবার পরিধি সম্প্রসারণে যে আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে। তাই বন্দর থেকে ন্যায্য পৌরকর নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সহজ হবে।
বন্দর থেকে প্রস্তাবিত পৌরকরের প্রায় পুরোটা আদায় কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে মেয়র বলেন, বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা বড় বড় ট্রাক-লরি করপোরেশনের তৈরি রাস্তা ব্যবহার করে। এগুলো মেরামত করতে আমাদের প্রচুর অর্থ খরচ হয়। তাই সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের কাছে তাদের আয়ের ১ শতাংশ অর্থ চেয়েছিলাম। সার্ভিস চার্জ দিলে বছরে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বন্দরকে। তখন তারা আমাকে রিকুয়েস্ট করে ওটা পৌরকরে অ্যাডজাস্ট করতে। তাছাড়া আইনেও সার্ভিস চার্জ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই ১৬০ কোটি টাকার যে পৌরকর আমরা পাব সেটাই চেয়েছি।
মেয়র শাহাদাতের উদ্যোগ : ১৬০ কোটি টাকার পুরোটা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়ার পর গত বছরের (২০২৪) ১৫ ডিসেম্বর চবক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় চসিক। এতে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বন্দরের পরিশোধিত অঙ্ক বাদ দিয়ে বাকি ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। পত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছর থেকে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর ধার্য করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নৌপরিবহন সচিবকেও চিঠি দেয় চসিক। এতে চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকর পরিশোধে চবককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে বলা হয়। চসিকের চিঠি পেয়ে সার্ভে কমিটি গঠন করে চবক। কমিটি চসিকের পাওনা পরিশোধে সুপারিশ করে।
পরবর্তীতে ৬ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয় চবক চেয়ারম্যানকে। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবমতে পৌরকর বাবদ চাওয়া ১১৫ কোটি টাকার মধ্যে জয়েন্ট সার্ভে কমিটির রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে কম-বেশি সমন্বয়ের শর্তে আপাতত ১০০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করা যেতে পারে। বিষয়টি নির্দেশক্রমে জানিয়ে দেওয়া হলো।
মন্তব্য করুন