চট্টগ্রামের একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সোহেল ইয়াছিন। গত ৭ এপ্রিল তিনি নগরীর এপিক হেলথ কেয়ারে হরমোন পরীক্ষা টিএসএইচের জন্য নমুনা জমা দেন। রাতের বেলায় রিপোর্ট আসে ১১.৫১। চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখালে তিনি একই পরীক্ষা আরেক ল্যাবে করতে বলেন। পরবর্তীতে নগরীর শেভরন হাসপাতালে একই পরীক্ষা করালে রিপোর্ট আসে ৫.৮০। চিকিৎসক এ রেজাল্টটিকে ভুক্তভোগীর শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মিল দেখে সঠিক হিসেবে ধরে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে পুরো বিষয়টি তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন সোহেল ইয়াসিন। এতে মন্তব্যের ঘরে ইপিক হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভিন্নজন। অনেকে লেখেন, এপিককে বিশ্বাস করে কতজনই না ভুল চিকিৎসা নিয়েছেন! আবার কেউ কেউ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এপিকের ভুল হলে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোহেল ইয়াছিন কালবেলাকে বলেন, গত ৭ এপ্রিল সকালে এপিকের আন্দরকিল্লা ব্রাঞ্চে অন্যান্য বেশকিছু টেস্টের সঙ্গে খালি পেটে টিএসএইচ পরীক্ষাও করতে দেই। ওই দিন রাতে রিপোর্ট পাই। এ টেস্টে এপিকের হাইয়ার রেফারেন্স ভ্যালু ৪.২০। আর আমার রেজাল্ট ১১.৫১। পার্থক্য/নরমাল রেঞ্জের চেয়ে ৭.৩১ বেশি। যেটা প্রাথমিকভাবে আমার অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। কারণ আমার শারীরিক তেমন কোনো প্রবলেম নেই। এই রিলেটেড কোনো উপসর্গও নেই।
তিনি বলেন, টেস্টটা আমার ডাক্তার সাজেস্ট করেনি। এপিকের একটা ‘এক্সিকিউটিভ প্রিমিয়ার চেকআপ’ প্যাকেজ আছে। রেগুলার চেকআপ করতে গিয়ে আমি তাদের সেই প্যাকেজ নেই। পরদিন অন্যান্য রিপোর্টসহ চিকিৎসককে দেখাই। এই রিপোর্ট দেখে তিনিও সন্দেহ করেন। কারণ আমি তার নিয়মিত রোগী। আমার ফিজিক্যাল কন্ডিশন, প্রিভিয়াস হিস্ট্রি ও অন্যান্য রিপোর্টের সঙ্গে এপিকের এই রেজাল্ট কোনোভাবেই ম্যাচ করে না। তাই তিনি এটা রিচেক/ক্রস করার সাজেশন দেন। সোহেল ইয়াসিন বলেন, পরেরদিন ৯ এপ্রিল আমি শেভরনে খালি পেটে টিএসএইচ, ফ্রি-টিফোর টেস্টের স্যাম্পল দেই। সন্ধ্যায় রিপোর্ট পাই। এই টেস্টে শেভরনের হাইয়ার রেফারেন্স ভ্যালু ৫.০। আর আমার রিপোর্ট আসে ৫.৮০। পার্থক্য ০.৮০। আমার চিকিৎসক এই রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করেই আমাকে প্রেসক্রাইব করেছেন।
তিনি বলেন, আমার ডাক্তার অন্যান্য রিপোর্ট এবং আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এপিকের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে শেভরনের রিপোর্টকেই গ্রহণ করে আমাকে প্রেসক্রাইব করেন। আমরা এপিকের মতো এসব ল্যাবের চাকচিক্যে পড়ে বিভ্রান্ত হই। এ শহরের হাজার হাজার রোগী এদের ভুল রিপোর্টে ভুল চিকিৎসা পাচ্ছে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এসব বিষয়ে কড়া নজরদারি করা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এপিক হেলথ কেয়ারের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) টিএন হান্নান ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে রিপোর্টসহ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করতে বলেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিয়ে কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন