চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চ, প্যান্ডেল, চেয়ার, ব্যানারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকালের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেশ কয়েকজন যুবক এসব সরঞ্জাম ভেঙে তছনছ করা হয়।
পরিষদের সমন্বয়কারী সুচরিত দাশ খোকন বলেন, সন্ধ্যার দিকে ৪০-৫০ যুবক এসে ডিসি হিলে আমাদের অনুষ্ঠান মঞ্চে হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় প্যান্ডেলসহ মঞ্চের সামনে থাকা বেশকিছু চেয়ার। সোমবার সকাল থেকে এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্চ তৈরি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। এখন দুর্বৃত্তদের হামলায় সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছে। তাই এখানে আর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিসি হিলে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের অন্যতম সংগঠক প্রণব চৌধুরী বলেন, পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজনকে ঘিরে এখানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে পুরো ডিসি হিলে প্যান্ডেল তৈরিসহ নানা সাজসজ্জা করা হয়েছিল। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন যুবক প্রবেশ করে মঞ্চ থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। বৈশাখের আগের দিন এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি বড় ধাক্কা। এমন ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এর প্রতিবাদে ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
সুদীপ্ত বিশ্বাস বিভু নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বৈশাখী মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। ২০-২২ জন লোক সন্ধ্যার সময় অতর্কিতে ডিসি হিলে ঢুকে ভাঙচুর করে চলে গেছে। শুরু থেকেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালনে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়ে আসছিল। অনুমতি দেওয়া হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে। প্রশাসনের তরফ থেকে আয়োজকদের হুমকির সুরে বলা হয়েছে অন্তত ২০-২২টা সংগঠনকে যেন অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠতে দেওয়া না হয়। এর সঙ্গে ছিল নানামুখী অসহযোগিতা ও চাপ প্রয়োগ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম কালবেলাকে বলেন, মঞ্চ ভাঙচুরের বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে আমাদের একটি টিম আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম কালবেলাকে বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক সেখানে গিয়ে ব্যানার ছিড়ে ফেলে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানান, সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের ডিসি হিলে গত ৪৬ বছর ধরে বাংলা নববর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করে আসছে। এবার ৪৭ বারের মত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে তারা আবেদন করে। কিন্তু আয়োজকদের সঙ্গে প্রশাসনের সভায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানের অনুমতি ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এতে আয়োজকরা অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। পরে ১০ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ডিসি হিলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর গানের তালিকা প্রশাসনকে আগেই দেখাতে হবে।
পহেলা বৈশাখের এ অনুষ্ঠান দেখভাল করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটিও করে দেওয়া হয়।
আয়োজকরা সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইলেও তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। পাশাপাশি ‘বিতর্ক হতে পারে’ –এমন কোনো গান বা কবিতা না রাখার অনুরোধ করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এবারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ৬০টির মতো সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন