বাংলায় ইসলামের প্রবেশদ্বার বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই নগরীর পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত ঐতিহাসিক ইসলামিক নিদর্শন। চট্টগ্রামের ইসলামী ঐতিহ্যের বাহক এমনই এক নির্দশন হলো শতবর্ষী ওলী মিয়া কন্ট্রাক্টর জামে মসজিদ।
নগরীর দেওয়ান হাট থেকে হালিশহর বা অলংকার যাওয়ার পথে হঠাৎই নজর কাড়ে এই অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি।
ব্রিটিশ আমলের জমিদার ও রেলওেয়ের ঠিকাদার ওলী মিয়া কন্ট্রাক্টর ১৯২১ সালে নগরীর ডবলমুরিং থানার অধীন মনছুরাবাদে সড়কের পাশে এ মসজিদ তৈরি করেন। নয়নাভিরাম কারুকার্য শোভিত এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে। নির্মাণকাজ শেষ করতে লেগেছে সুদীর্ঘ ১০ বছর। এতে ব্যবহৃত সব তৈজসপত্র ও নির্মাণসামগ্রী কলকাতা থেকে আনা হয়ে। ধারণা করা হয়, মসজিদ নির্মাণের মূল কারিগরকেও কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল।
সরেজমিনে মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, চার কোণায় ৪টি বড় মিনারসহ পুরো মসজিদজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির ২৩টি মিনার। প্রতিটি মিনারে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজ আর চোখ ধাঁধানো নকশা। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৫০ ইঞ্চি চওড়া। ভেতরের মিহরাব এবং এর আশপাশের নকশা বেশ মনোমুগ্ধকর। সেখানে চীনামাটির ভাঙা টুকরা আর রঙিন কাঁচ দিয়ে অভিনব সব কারুকাজ করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে আর বাইরের দেয়ালেও রয়েছে বাহারি নকশা।
মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এক তলা বিশিষ্ট এই মসজিদ ভবন নির্মাণে কোনো রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। চুন-সুড়কি দিয়ে পুরো নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে টালি, লোহার বার ও পাত।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২০ থেকে ১৩০ ফুট, প্রস্থ ১০০ ফুট। মসজিদের বিশেষ আকর্ষণ হলো পাশেই আছে শানবাঁধানো পুকুর। বর্তমান সময় শহরে যেটি একেবারেই বিরল। এ ছাড়া মসজিদের চারপাশে আছে অসংখ্য ফুলের গাছ।
শতবর্ষী এই মসজিদ সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ২০১৪ সালে। মূল স্থাপত্যশৈলী অক্ষত রেখে সংস্কার কাজ শেষ করতে লেগে যায় চার বছর। ব্যয় হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
মসজিদটি বর্তমানে পরিচালনা করছেন প্রতিষ্ঠাতা ওলী মিয়া কন্ট্রাক্টরের চতুর্থ প্রজন্মের সন্তান মোহাম্মদ তারেক সিদ্দিকী। তিনি কালবেলাকে বলেন, এই মসজিদটি আমাদের পারিবারিক মসজিদ। ১৯২১ সালে আমার দাদার দাদা নির্মাণ করেন। কালের পরিক্রমায় চতুর্থ প্রজন্মের সন্তান হিসেবে আমি পরিচালনায় আছি।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষ মরহুম ওলী মিয়া কন্ট্রাক্টর মসজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে দলিল রেখে গেছেন। এই মসজিদটা নির্মাণের সময় যেমন ছিল, ১০৪ বছর পর এখনো তেমনই আছে। মধ্যখানে কয়েকবার সংস্কার করা হলেও মূল স্থাপনার কোনো বিকৃতি করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪ বছর ধরে সংস্কার করা হয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই মসজিদকে পরিচালনা করে যাবে।
মন্তব্য করুন