চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. আব্দুল্লাহ (ছদ্মনাম)। বছরের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সে কোনো বই পাননি। স্কুলে আসা-যাওয়া আর খেলাধুলাতেই তার দুই মাস চলে গেছে। পবিত্র রমজানের জন্য মার্চ মাসের পুরোটা বন্ধ থাকবে স্কুল। বই না থাকায় বাড়িতে পড়ারও তাড়া নেই তার। এপ্রিলে বই পেলে পড়া শুরু করবে সে।
আব্দুল্লাহর মতো অবস্থা তার অন্য সহপাঠী ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও। বছরের দুই মাসে এই বিদ্যালয়ের শুধুমাত্র দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার কালবেলাকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আংশিক বই পেয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে।
বছরের তৃতীয় মাস চললেও এখনো চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের বই এসেছে মাত্র ৬০ শতাংশ। আর প্রাথমিকের বই এসেছে ৯৩ শতাংশ। ফুল সেট বই না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। কেউ চড়া দামে পুরোনো বই কিনে কোনো মতো পড়াশোনা চালাচ্ছে। কেউবা পিডিএফ থেকে ফটোকপি করে পড়ছে। যাদের এই দুইটার সামার্থ্য নেই তাদের পড়াশোনার অবস্থা শোচনীয়। দুই মাসেও বই না আসায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে হাতাশ অভিভাবকরা।
চট্টগ্রাম হালিশহর ক্যানটেনমেন্ট স্কুলের নবম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বাবা শেখ ফজলুল করিম আক্ষেপ করে কালবেলাকে বলেন, বছরের দুই মাস চলে গেছে। আমার মেয়েকে স্কুল থেকে এনসিটিবি’র কেবল বাংলা ব্যাকরণ বইটি দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত পুরোনো বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আমি আন্দরকিল্লার দোকানে খুঁজে খুঁজে ২০০ টাকা করে কয়েকটি পুরাতন বই কিনে এনেছি।
এগুলো দিয়ে কোনোমতে পড়াশোনা চলছে। এরকম হলে আমাদের সন্তানরা তো পড়াশোনায় পিছিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রমজানের বন্ধে স্কুল থেকে বাড়ির কাজ ও সিলেবাস দিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকেরা। বই ছাড়া তারা এসব কীভাবে করবেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, এবার চট্টগ্রামে নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৭৩। ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, মাধ্যমিক ভোকেশনাল, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন মিলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন। এরমধ্যে বুধবার (০৫ মার্চ) পর্যন্ত বই এসেছে ৯১ লাখ ৮৬ হাজার কপি। ষষ্ঠ শ্রেণির ৬টা উপজেলার বই আসেনি। সপ্তম শ্রেণির চাহিদার অর্ধেক বই এসেছে। অষ্টম শ্রেণির ৩টা বিষয় বিষয়ের বই এসেছে। ৯ম শ্রেণির বিভাগীয় কিছু বই বাদে সব বই এসেছে। দশম শ্রেণির সব বই এসেছে।
অন্যদিকে মাদ্রাসার মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আসেনি। দাখিল ৮ম শ্রেণির ৩টা বিষয়ের বই এসেছে। বাকি শ্রেণির বই মোটামুটি সব এসেছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা কালবেলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বই এসেছে। আমরা বই আসা মাত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি। মাউশি, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
প্রাথমিকে এসেছে ৯৩ শতাংশ চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাথমিকের ৯৩ শতাংশ বই এসেছে। প্রাথমিকে ৪০ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৬ কপি চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে তৃতীয় শ্রেণির ৩১০টি, চতুর্থ শ্রেণির ৬৯ হাজার ৯৮৬টি ও পঞ্চম শ্রেণির ১ হাজার ২১০ টি বই ঘাটতি রয়েছে। আর প্রাক-প্রাথমিকে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮২ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে সব বই এসেছে।
চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পাচ্ছে। এবার নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ১৮৭টি।
চট্টগ্রামের ৬ থানা শিক্ষা অফিস ও সব উপজেলা মিলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৪ জন। এদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ জন। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯০ জন।
চট্টগ্রাম জেলা সহাকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, প্রাথমিকের ৯৩ শতাংশ বই এসেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কিছু বই ঘাটতি আছে। আশা করছি বাকিগুলো দ্রুতই পেয়ে যাব।
মন্তব্য করুন