চারদিন ধরে ঘরে পানি নেই। এমনিতেই পানি পাই না, এতদিন যা আসত; এখন তাও বন্ধ। রান্নাবান্না তো দূরে থাক, ওয়াশরুমেও যাওয়া যাচ্ছে না। চারদিন ধরে গোসল করতে পারছি না। ৪০০ টাকায় এক ড্রাম পানি এনে কোনোমতে চলছি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের নয়াবাজার মৌসুমি এলাকার বাসিন্দা তাজমহল বেগম। ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন ফেটে যাওয়ায় চারদিন ধরে পানি পাচ্ছেন না তিনি।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফরহাদের অবস্থাও তাজমহল বেগমের মতো। গত চারদিন ধরে পানি না পেয়ে প্রতি ড্রাম ৫০০ টাকা করে কিনে দৈনন্দিন কাজ সারছেন তিনি।
শুধু তাজমহল বা ফরহাদ নন, এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের অন্তত ৩০ এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। ফলে গভীর নলকূপের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। এক কলসি পানির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবার কেউবা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে এক ড্রাম পানি কিনে কোনোমতে দৈনন্দিন কাজ সারছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার নগরীর কুয়াইশ এলাকায় ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ করার সময় মাটি খোঁড়ার যন্ত্রের আঘাতে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপ ফেটে যায়। যার কারণে ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ বন্ধ পড়ে আছে। এটি থেকে দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি পাওয়া যেত।
সূত্রে আরও জানা যায়, পাইপ ফেটে যাওয়ায় নগরীর নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকানন, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখান বাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনীয়ালাপাড়াসহ অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও গভীর রাতে একটু আসলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন কালবেলাকে বলেন, ‘পাইপলাইন মেরামতের কাজ চলছে। এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত কাজ শেষ হতে শুক্রবার সকাল বা দুপুর হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে মোট ২৮ কোটি লিটার পানি। এই শোধনাগারটা বন্ধ থাকায় মাত্র ১৪ কোটি লিটার পানি আসে। এটা রেশনিং করে সব জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে শেষের দিকে যারা আছেন, তারা পাচ্ছেন না।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, খননযন্ত্রের আঘাতে পাইপলাইনের সংযোগস্থলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইনটি মাটি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট গভীরে। প্রথমে পাইপে জমে থাকা পানি বের করতে হয়েছে। এরপর ঢালাই ভেঙে মেরামতকাজ শুরু করতে হয়। এ কারণে দেরি হচ্ছে।
মন্তব্য করুন