চট্টগ্রামের রাউজানে দিন-দুপুরে পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবু (৩৮) নামে সাবেক এক ছাত্রদল নেতাকে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনি মারা গেছেন ভেবে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। ঠিকাদারি কাজ নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা গ্রামের শ্রী শ্রী অন্নদা ঠাকুর আদ্যপীঠ রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দিরসংলগ্ন পুকুরপাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবু চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সদস্য। তিনি রাউজান সদর ইউনিয়নের নতোয়ান বাগিচা খানখানবাদ এলাকার হাফেজ মাওলানা নুর মোহাম্মদের ছেলে। এলাকায় তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর রাউজানে ছড়ি ঘুরিয়েছেন সে সময়ের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ফজলে করিম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি। তার সাম্রাজ্য দখলে নিতে মরিয়া এখন উত্তর জেলা বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকার। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এর বাইরে ঠিকাদারি কাজকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকেও এই হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটতে পারে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, শুধু ঠিকাদারি নয়, চাঁনমিয়া শাহ মাজারের ওরশকে কেন্দ্র করেও এ গুলির ঘটনা হতে পারে। তবে এর বাইরে আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. রায়হান স্থানীয় আরও ৩-৪ জনকে নিয়ে এই গুলি চালায়। তবে তারা (গুলি চালানো সন্ত্রাসীরা) কোন পক্ষ সমর্থিত তা জানা যায়নি। সাজ্জাদ সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা আছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই হত্যা মামলা। তাকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ফেসবুক লাইভে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে ‘পেটানোর হুমকি’ দিয়েছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রায়হানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
পিয়ার মোহাম্মদের মা মোরশেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে রোজা রেখে পুকুর সেচের কাজ দেখার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়েছিল। ১১টার পর খবর পাই ছেলেকে গুলি করে ফেলে গেছে। আমার নিরীহ ছেলের ওপর যারা গুলি চালিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরাফাত হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দুর্বৃত্তরা তাকে (পেয়ার মোহাম্মদ) গুলি করে মারা গেছে মনে করে পুকুরপাড়ে ফেলে যায়। আমরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে পরে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাই। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
অন্নদা ঠাকুর আদ্যপীঠ রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দির পুরোহিত তপন চক্রবর্তী জানান, মন্দিরের সামনের পুকুরে ঘাট তৈরির জন্য সরকারি বরাদ্দ এসেছে। এ কাজ করছেন পেয়ার মোহাম্মদ। কাজ শুরুর জন্য পুকুরের পানি সেচ দিচ্ছেন। সে কাজ দেখার জন্য আসার পর একদল দুর্বৃত্ত এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে আমার প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা আছে। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় রাউজান থানা পুলিশের একটি টিম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আদ্যপীঠ মন্দিরে ভাণ্ডারির ভেতর পুকুরপাড়ে পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবু নামে এক ব্যক্তিকে কে বা কারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ রাউন্ড খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন