চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মান, নির্বাচনী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দত্ত, তারিক আহমদ, সাম্যশ্রী বড়ুয়া এবং নুরুদ্দিন আরিফ চৌধুরীর।
আইনজীবীরা বলেন, বর্তমান সমিতির দুই নেতাই বিএনপিপন্থি। আওয়ামী সরকারের আমলে নির্বাচনে তারা জয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম আদালতে রাজনৈতিক সম্প্রীতি কেমন ছিল—এর ভালো উদাহরণ এটি। রাজনৈতিকভাবে আইনজীবীরা কখনো এভাবে মুখোমুখি হননি। বর্তমান গোষ্ঠীগত বিভাজন খুব বিব্রতকর। এখানে দুপক্ষেরই দায় আছে। প্রথমত চিন্ময়ের জামিন নিয়ে এত কট্টর অবস্থানে যাওয়া সনাতনী আইনজীবীদের উচিত হয়নি। আবার আইনজীবীর হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনাটিও মেনে নেওয়ার মতো নয়। এরপর থেকে এখন যা হচ্ছে, সেগুলো কেবল অস্বস্তি ছড়াচ্ছে।
পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি সমিতির গঠনতন্ত্রের বিধানমতে সমিতির নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের মনোনীত করা হয়। এরপর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত এবং ব্যালট পেপার ছাপানোসহ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু মঙ্গলবার আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব করে একটি দরখাস্ত দিয়েছে। অন্যদিকে ঐক্য পরিষদ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করে। দুটি আবেদনই সমিতির গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। সমিতির কোনো সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হেনস্তার শিকার হোক, তা নির্বাচন কমিশন চায় না।
আরও বলা হয়, দুপক্ষের পারস্পরিক অবস্থান নির্বাচনের প্রতিকূল। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ অবস্থায়, ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ বা পরিবেশ নেই। তাই নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে নির্বাচন পরিচালনায় অপরাগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচন হচ্ছে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সভা ডাকা হবে। সেখানে অ্যাডহক কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া আজ বুধবার কমিটির মিটিং আছে।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী হওয়া অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে হুমকি গেছে। এ ছাড়া, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ আইনজীবীরা আওয়ামীপন্থিদের মনোয়ন বাতিলের জন্য আবেদন-সমাবেশ করেছে। এর সঙ্গে আমাদের প্রার্থীদের কোনো যোগসূত্র নেই।
‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদের’ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা তো কারও সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে যাইনি। সাধারণ আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তারা নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন ভেবে বাধ্য করে তাদের পদত্যাগ করিয়েছে বলে আমার ধারণা।
মন্তব্য করুন