নেই বৈধ কোনো আয়ের উৎস। তবুও পাঁচতলা বাড়ির মালিক চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক গাড়িচালক মো. তাজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন নেসা বেগম। নগরীর পশ্চিম শহীদনগর এলাকার তৈয়্যবিয়া হাউজিং সোসাইটিতে খাইরুন নেসা বেগমের নামে কেনা তিন শতক জমিতে একটি পাঁচতলা বাড়ির খোঁজ পেয়েছে দুদক।
বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। পাশাপাশি খাইরুন নেসার ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুই বছর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাজুলকে।
তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম ওয়াসার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৯ সালে তিনি ওয়াসায় গাড়ি চালকের সহকারী পদে যোগদান করেছিলেন।
২০২২ সালের ৫ মার্চ তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাইরুন নেসার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। চলতি মাসে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। চট্টগ্রাম মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ নুরুল ইসলাম অভিযোগপত্র গ্রহণের পাশাপাশি মামলাটি বিচারের জন্য আদালতও নির্ধারণ করে দেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, মো. তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাইরুন নেসা বেগমের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলাটির বিচার নিষ্পত্তির জন্য বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানেই বিচার কাজ চলবে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে দুই হাজার টাকা বেতনে চট্টগ্রাম ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হয়ে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল ইসলাম। এরপর তিনি ‘প্রমোশন’ পেয়ে হন গাড়িচালক। দুদক ২০২২ সালের ৫ মার্চ তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাইরুন নেসার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০২৩ সালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে।
তিন বছর মামলার তদন্ত শেষে চলতি বছরের শুরুতে আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, স্ত্রী ও নিজের নামে তাজুল ইসলাম নগরের রৌফাবাদ এলাকায় ২০০২ সালে তিন শতক জায়গা কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন। অথচ তার গৃহিণী স্ত্রীর আয়ের কোনো উৎস নেই। নিজের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিতে স্ত্রীর নামে জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন তাজুল। তারা বাড়িটির অর্ধেক নির্মাণের ব্যয় দেখান ২৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু তদন্তে দুদক গণপূর্ত চট্টগ্রামের তিন উপপ্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ পরিমাপ করে পায় ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় আরও ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে মোট ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায় দুদক।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, তাজুল ইসলামের স্ত্রীর নামে থাকা প্রায় ৬০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের কোনো বৈধ উৎস খুঁজে পায়নি দুদক। মূলত তাজুল ইসলামের অবৈধ আয়ে এসব সম্পদ গড়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন