গেল ১৫-১৬ বছরে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম যত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে এখন সবগুলো নগরবাসীর জন্য ক্ষতির কারণ বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম মহানগর এবি পার্টির উদ্যোগে পলিসি বেইজড পলিটিক্স চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য পাঁচ প্রস্তাব বিষয়ে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এর ওঠা-নামার রাস্তা রাখা হয়েছে মাত্র দুটি। বলা হয়ে থাকে কেউ একজন বাড়ি থেকে অফিসে আসার সুবিধার্থে এই ফ্লাইওভার করেছে। এটা মানুষের জন্য নয়। একইভাবে ২৫টি উন্নয়নকাজের পরিকল্পনার কথা বলেই আত্মসাৎ করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম প্রতি বছর ঘাবলামারা বন্য হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ যেখানে পানিতে ডুবে থাকে, মারা যায়; তা রিপাবলিক রাষ্ট্র হতে পারে না। এই ঘটনাগুলো রিপাবলিক রাষ্ট্রের সঙ্গে যায় না।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, কোনো সীমান্ত থেকে এসে চট্টগ্রামের এক ইঞ্চি মাটিতে কেউ হাত দিলে তাদের চোখ থাকবে না। আমরা মেনে নেব না। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হাত দেওয়ার আগে ভেবে দেখবেন। পুরোনো আমলের বস্তপচা রাজনীতি দিয়ে বাংলাদেশকে ঘুরানো সম্ভব না। চট্টগ্রামবাসীকে এই রাজনীতিতে (এবি পার্টি) যুক্ত হওয়ার অনুরোধ রইল। চট্টগ্রামে যে সম্ভাবনা বা সামর্থ রয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে ন্যূনতম আরও ৪-৫টি জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠান করা যাবে। কোনো না কোনো ফর্মে টাকাগুলো চট্টগ্রামে আসলেই আমাদের পরিবর্তন আসবে।
ফ্লাইওভার না করে পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করলেও কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা যেত উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, পাহাড়-পর্বত-সমুদ্রের অপার সম্ভাবনার স্থান চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের চেয়েও ভালো ভিউ। চট্টগ্রাম বা পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়-সমুদ্রকে ঘিরে যদি পর্যটনস্পট আরও বানানো যেত তাহলে শুধু এই খাতই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হতো। অথচ তার কিছুই তুলনামূলক হয়নি। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলাই যায়, বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার না করে যদি পর্যটনকেন্দ্রও করা যেত তাহলে এই খাত থেকে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হতো। আমাদের সম্ভাবনা থাকলেও আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানকে কাজের সুযোগ না দিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যের জন্য চুক্তি করছে সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলাপ নেই। এসব সংকট কে তুলে ধরবে?
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, চট্টগ্রামের সমস্যগুলো নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদেরই কথা বলতে হবে। ডেঙ্গু মশায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। তাহলে কেন রাষ্ট্র এই ইস্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? এটা নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা নীরব। তারা কোনো আলোচনাই করে না। চট্টগ্রামের টানেল নির্মাণের শুরুর দিকটাতে বলা হয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকা এখান থেকে আয় করা সম্ভব। কিন্তু আজ ঘুরে দেখলাম, সেখানে তেমন কোনো গাড়িই নেই। পরিস্থিতি এমন যে, প্রতিদিন এই টানেল থেকে আয় লাখ টাকা অতিক্রম করার সম্ভাবনাই নেই। তাহলে এখান থেকে ভালো কিছু আমরা কীভাবে আশা করব? এই টানেল করার আগের ভাবার দরকার ছিল এখান থেকে কী পরিমাণ আয় হবে। অথচ আমেরিকায় ১৬টা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৬টি ফেডারেল টিম রয়েছে। তারা কীভাবে কাজ করছে, কীভাবে করা উচিত- সবকিছুর যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের বেলায় সবই উলটো।
৫৩ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা রাজ্যই রয়ে গেছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের বিষয়। রাষ্ট্রের ঘোষণায় বলা ছিল আমরা একটা রিপাবলিক রাষ্ট্র দেশ। এই রাষ্ট্র রাজার হবে না, প্রজার হবে। কোথায় কী পরিমাণ ট্যাক্স দেওয়া হবে সেটা জনগণই নির্ধারণ করবে। তারা চেয়েছেন আমরা রাজতন্ত্র চাই না। কিন্তু আমরা গত ৫৩ বছরে দেখলাম, রাষ্ট্রটা রাজ্যই রয়ে গেল। রাজ বংশের শাসন থেকে রাষ্ট্রটাকে উদ্ধার করা যায়নি। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রকে এই ধারা থেকে উদ্ধার করতে চাই। নতুন জেনারেশনের পলিটিক্স দরকার। জুলাই আগস্টের নায়করা ফের রিপাবলিকের কথা বলছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি ওই আকাঙ্ক্ষার জায়গায় থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রচুর গর্ব করে বলেছি, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে হাজার হাজার নটিক্যাল মাইল সমুদ্র পেয়েছি। কিন্তু লাভ হলো কী? পরিবেশ নিয়ে যারা বোঝেন তারা তাদের কাজকে এনজিও হিসেবে রূপ দিতে চাচ্ছে। জাহাজ ভাঙা শিল্প নিয়ে উপদেষ্টারা জানান, যে ইন্ডাস্ট্রি মানুষ মারে তা চলতে পারে না। আমার প্রশ্ন কোন ইন্ডাস্ট্রিতে মানুষ মারা যায় না? এটা তো যুক্তি হতে পারে না। পরিবেশের আপবাদ দিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠানকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। চট্টগ্রামে এক সময় ২০০ এর বেশি ইয়ার্ড ছিল। এখন কেন নেই? আমাদের চেয়ে তো ভারতে আরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সুতরাং পরিবর্তনটা কোথায় করতে হবে সেটাই আগে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন