খালের প্রস্থ ২৫ থেকে ৪০ ফুট। কিন্তু দখল-দূষণে খাল হয়ে গেছে সরু, প্রস্থ ঠেকেছে পাঁচ থেকে ১০ ফুটে। দখল-বেদখলে দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই বেহাল চট্টগ্রাম নগরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কালিরছড়া খালের। খালটি উদ্ধারে প্রায় ৮ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা। সবশেষ টানা অভিযানে অচল খালটি সচলের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, টানা অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানার হারবাতলী থেকে উজানের দিকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। টানা অভিযানে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৭০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গরুর খামার, গুদামঘর, আবাসিক প্লটের সীমানা প্রাচীর, বসতঘর, শৌচাগার, দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের সেমিপাকা ও পাকা স্থাপনা। অভিযানে মোট অবৈধ ২৮টি বিদ্যুৎসংযোগ, ৮টি পানির সংযোগও স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এর আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) কালীরছড়া খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অভিযানের শুরুতে উদ্ধারকারী দল দখলদারদের বাধার মুখে পড়ে। হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) খাল উদ্ধারে আবারও অভিযান শুরু করে প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডের মাঝে প্রবাহিত কালির ছড়া খাল। দুই ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি দখলের কারণে প্রশস্ততা হারিয়ে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার লম্বা ও ২৫ থেকে ৪০ ফুট প্রস্থের খালটির প্রশস্ততা পাঁচ থেকে ১৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। দখলদাররা অনেক এলাকায় খালের গতিপথও পরিবর্তন করেছেন। খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে শত শত বাসিন্দাকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। খালটি উদ্ধারে ‘কালির ছড়া খাল অবমুক্তকরণ সংগ্রামী জনতা’র ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল একটি পক্ষ। খালের পাশে বিশ্বব্যাংক কলোনি আবাসিক এলাকা, শাহের পাড়া, লেকসিটি, জয়ন্তিকা, রামপুরা, ভূমিহীন, ছিন্নমূল, যমুনা, সবুজ বাংলা, শাপলা ও কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকা অবস্থিত। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে এই ১১ এলাকাসহ আকবর শাহ ও কাট্টলী এলাকার বাসিন্দারা খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছিল৷
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, টানা দুই দিনের অভিযানে অবৈধ দখলদারদের টনক নড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, এভাবে অবৈধভাবে দখলদারিত্ব ধরে রাখা যাবে না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে, পাহাড়, খাল এসব থেকে আপনারা সরে পড়ুন। পরিবেশ রক্ষায় অন্যান্য জায়গায়ও একইভাবে অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন