লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজার যখন সিন্ডিকেটে বন্দি, তখন নিম্নবিত্তদের আশার আলো হয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের ১১ তরুণ। এই ‘দুঃসময়ে’ অসহায় মানুষদের মাঝে ১৪০ টাকায় এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে ডিম বিক্রি দিয়ে শুরু হয় তাদের এই কার্যক্রম।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) তারা ডিম বিক্রি করেছেন চকবাজারের দুটি মোড়ে। তাদের সেই ডিম বিক্রি কর্মসূচি চলবে সিন্ডিকেট ভাঙা পর্যন্ত।
ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রির এই উদ্যোগ নিয়েছেন মোহাম্মদ আরিফ নামের এক তরুণ। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ ইমরান, রেজাউল করিম, মো. সেলিম, মো. সোহেল, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আবদুল শুক্কুর, মাসুদ আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ইমাম হাসান, নুর জামান ও মোহাম্মদ জিয়া বাবলু নামের আরও ১০ তরুণ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বহদ্দারহাটের দুটি মোড়ে ৩ হাজার ডিম বিক্রি করেন এই তরুণরা। সেখানে ব্যাপক সাড়া মেলায় ও মানুষদের অনুরোধে তারা শুক্রবার বিকেলে চকবাজারের অলি খাঁ মসজিদের সামনে এবং গোলজার মোড়ে ডিম বিক্রি শুরু করেন। এদিন তারা মানুষদের হাতে ৬ হাজার ডিম তুলে দেন। তৃতীয় দিন শনিবার চট্টগ্রামের কিছু উদ্যমী তারুণ্যের উদ্যোগে এবং কয়েকজন খামারির অনুপ্রেরণায় ডিমের ডজন ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে কোতোয়ালী মোড়ে। বিকেল ৪টা থেকে সংগ্রহ করা যাবে ডিম।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে গোলজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর তাকে তাকে ডিম। চারপাশে উপচে পড়া মানুষের ভিড়। এতটাই বেচাকেনা হচ্ছিল একটু অবসরের ফুরসতও পাচ্ছিলেন না তরুণরা। প্রতিজনকে ১ ডজনের বেশি ডিম দিচ্ছিলেন না তারা। তবে নারীরা যেহেতু প্রায় সময় বাসা থেকে বের হতে পারেন না, তাই তাদের দেড় ডজন ডিম কেনার সুযোগ দিচ্ছেন তারা।
এই উদ্যোগের প্রধান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষ একটা ডিমও খেতে পারছেন না। অনেক ঘর আছে এক-দু মাস ডিম কিনতে পারেনি। এটা আমাদের খুবই পীড়া দিচ্ছে। ওই চিন্তা থেকে আমরা এই উদ্যোগের কথা ভাবি।
মোহাম্মদ ইমরান, রেজাউল করিম, মো. সেলিম বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা চিন্তা করছি, সরাসরি খামার থেকে ডিম এনে এরকম কার্যক্রম চালাই তাহলে সিন্ডিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের চাওয়া-সিন্ডিকেট ধ্বংস হোক, জনগণের জয় হোক।
তরুণদের উৎসাহ দিতে ঘটনাস্থলে মাথায় লাল সবুজের পতাকা লাগিয়ে হাজীর হন প্রবীণ গাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম শাহ। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট, দুর্বৃত্ত আর মুনাফাভোগীদের কারণে সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই চক্র তরুণদের হাত ধরে যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি সেটিকে নস্যাৎ করে দিতে চায়।
অন্য মানুষদের সঙ্গে সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ডিম কিনছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মোহাম্মদ ফোরকানুল ইসলাম। তিনি বলেন, তরুণদের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগের কারণে সাধারণ মানুষও ডিম খেতে পারবেন।
মন্তব্য করুন