ফের দুর্বৃত্তদের হামলায় আক্রান্ত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। এতে অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় অতর্কিতভাবে প্রেস ক্লাবের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ক্লাবে প্রবেশ করে কিছু দুর্বৃত্ত। পরে তারা চতুর্থ তলায় ক্লাবের মূল অফিসে ওঠে সেখানেও তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
একপর্যায়ে তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ বেশকিছু কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পরে তারা ক্লাবে উপস্থিত থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে সিনিয়র সাংবাদিক নির্মল চন্দ্র দাশ, গোলাম মর্তুজা আলী, হেলাল সিকদারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা অবরুদ্ধ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে থাকা ৪০ জন সদস্যকে উদ্ধার করছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা (বিএফইউজে)। এ সময় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, মিডিয়া রুম, মিটিং রুম, হিসাব বিভাগ, রিসিভশন ভাঙচুর করে। তারা সিসিটিভি ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্কসহ ক্লাবের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নেতারা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করতে হাতুরি ও শাবল দিয়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় উপস্থিত থাকা সাংবাদিকদের মারধরও করে ৩০ থেকে ৪০ জন বিএনপি সমর্থিত নেতা ও নামধারী সাংবাদিক। অথচ নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান গতকালও উল্লেখ করেন এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যারা এ দুর্বৃত্তপনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারাও। তবে প্রেস ক্লাবের নেতারা মনে করেন এমন হামলার পেছনে কোনো কোনো বিএনপি নেতার ইন্ধন রয়েছে।
নেতারা আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কক্ষ ভাঙচুর করে। তছনছ করে ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ নথিও। এ সময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ছিল মাদক মামলার আসামি, ধর্ষণ মামলার আসামি, সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু। ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠনে এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানান তারা। দুর্বৃত্তরা এর আগেও কয়েক দফায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা চালায়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক এমন হামলার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। দুর্বৃত্তদের ঐক্যবোদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে ক্লাবের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা।
হামলার ঘটনাটি জানানো হলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার, সেনা বাহিনীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে প্রশাসন। দলমত নিরপেক্ষ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বারবার দুর্বৃত্তদের এমন হামলার ঘটনায় আমরাও উদ্বিগ্ন।’
সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চর দখলের মতো চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কিছু ঘটতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি সেনা প্রশাসনের সঙ্গেও আলাপ করে তিনি জানান, প্রেস ক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।’
উল্লেখ্য, ১০ তলা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, হজ কাফেলা, আর্কিটেকচারাল অফিস, মোবাইল কমিউনিকেশন অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বাতিঘর নামে একটি বই বিপণি কেন্দ্র রয়েছে।
মন্তব্য করুন