দেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিতর্কিত ডোর টু ডোর প্রকল্প ঘিরে আবারও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বেতন পরিশোধ, শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য নিরসনসহ নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে নতুন করে এ অসন্তোষ দেখা দেয়।
তবে চসিকের কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে একটি মহল ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে পরিস্থিতি উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গত ৮ বছর ধরে ধুঁকতে থাকা এ প্রকল্প ঘিরে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা। এই প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার দাবি করেছেন তারা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের পর চলমান পরিস্থিতিতে ভাঙচুর হয় চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন। বেশ কয়েক দফা মেয়রের ওপর হামলা চেষ্টাও হয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনো থমথমে চসিকের প্রধান কার্যালয়। এরই মধ্যে চসিকের ডোর টু ডোর প্রকল্পের অধীনে থাকা ২ হাজারের বেশি শ্রমিকের বেতন নিয়ে অসন্তোষের বিষয়টি সামনে এসেছে। সর্বশেষ বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে সোমবার (১২ আগস্ট) চসিকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় দ্রুত বেতন পরিশোধের আশ্বাস জানান চসিকের কর্মকর্তারা।
এর আগে ২০১৬ সালে চসিকের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে নগরের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ডোর টু ডোর কার্যক্রম শুরু করে চসিক। এতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ২ হাজারের বেশি শ্রমিক। যেখানে প্রতি মাসে ২ কোটি টাকার বেশি বেতন খরচা হয় চসিকের। কিন্তু শ্রমিকের তালিকা না থাকা, নিয়োগ সুনির্দিষ্ট তথ্যে না থাকা, ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কের শীর্ষে থাকে এই প্রকল্প। পরে এই প্রকল্পে অনিয়ম রোধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চসিকের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। সর্বশেষ চসিক মেয়র রেজাউল ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ প্রকল্প আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। তবে গত ৮ বছরে প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
চসিকের একজন ওয়ার্ড সুপার ভাইজার কালবেলাকে বলেন, এ প্রকল্পে যারা বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন তারা বেশিরভাগই হরিজন সম্প্রদায়ের। কয়েকদিন থমথমে পরিস্থিতির পর চসিক বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু শ্রমিকরা বলছে অনেকের বেতন হয়নি। অনেকে এটা নিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে। আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে বর্জ্য অপসারণে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় সেই চেষ্টায় করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর হরিজন সম্প্রদায়ের সভাপতি বৃষ্ণ দাশ কালবেলাকে বলেন, অন্যদের বেতন মাসের প্রথম দিকে হয়। কিন্তু ডোর টু ডোরে যারা আছে তাদের বেতন হয় মাসের মাঝামাঝিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি এই বৈষম্য যেন দূর করা হয়। তা ছাড়া একই প্রকল্পের অধীনে থাকা কিছু শ্রমিকের বেতন গত মাসে বাড়ানো হয়েছে। অনেকের বাড়ানো হয়নি। সব বৈষম্য নিরসন না হলে আমরাও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
সূত্র মতে, চসিকের এই প্রকল্পের অধীনে কাজ করছে প্রায় ২ হাজারের বেশি অস্থায়ী শ্রমিক। যাদের ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ (কাজ নেই, মজুরি নেই) ভিত্তিতে বেতন পরিশোধ করা হয়। সবমিলিয়ে প্রকল্পের অধীনে থাকা শ্রমিকদের বেতন দিতে প্রতি মাসে ২ কোটি টাকা খরচা হয় চসিকের। যা চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাক্ষরে হয়ে থাকে।
শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ওই প্রকল্পের অধীনে থাকা শ্রমিকদের বেতন হয় এই সময়ে। এবারও একই সময়ে বেতন হচ্ছে। আজই ফাইল পাঠানো হয়েছে। ফাইলটি স্বাক্ষর হলে আগামীকালের মধ্যে বেতন হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন