কারফিউ, সরবরাহ সংকট, পরিবহন সংকটসহ নানা অজুহাতে গেল এক সপ্তাহের প্রতিদিনই দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে একেক ব্যবসায়ীর একেক রূপ দেখা গেছে। আদা, রসুন, চিনি, চাল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ৫ থেকে অন্তত ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছুর দামও কমে আসার আশ্বাস দিলেও ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, সুযোগ পেলেই আজগুবি সব অজুহাতেও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ায়, এখন তো বড় সুযোগ। পণ্য যেহেতু আগে থেকেই মজুদ রয়েছে সুতরাং দাম বাড়ার প্রশ্নই আসে না। এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডাল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে গেল এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ৬ থেকে ১৫ টাকা। গেল সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রতি কেজি আমদানিকৃত ও দেশি পেঁয়াজ ৮৭-৮৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকায়। অন্যদিকে ডালের দাম পাইকারিতে গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা। চালের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এর মধ্যে গেল কয়েক দিন আগে আবার চালের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।
অন্যদিকে তিন-চার দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতিমণ (৩৭.৩২ কেজি) পরিশোধিত পামঅয়েল বেচাকেনা হয়েছিল ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৯০০ টাকা। দুদিন আগে দাম বেড়ে এসব পামঅয়েল বেচাকেনা হয়েছে ৫ হাজার টাকায়। অন্যদিকে সুপার পামঅয়েলের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়ে মণপ্রতি ৫২০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। পাইকারিতে গতকাল সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয়েছে মণপ্রতি ৫৭০০ টাকায়।
এছাড়া মসলা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আদা ও রসুনের। গতকাল খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চিনা রসুন বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবারও একই মানের রসুন বেচাকেনা হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৫২ টাকায়। এই হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ টাকা। এভাবে চীন থেকে আমদানিকৃত আদার দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি আদা পাইকারিতে বেচাকেনা হয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার যা ছিল প্রতি কেজি ২৫০ টাকায়। সে হিসেবে পণ্যে দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
অন্যদিকে কয়েক দিন আগেও পাইকারি বাজারে চিনির দাম ছিল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫৯৮০ থেকে ৬০০০ টাকায়। কয়েক দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৬২৫০ থেকে ৬২৭০ টাকায়। চিনির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। এই দিন সকালে প্রতি বস্তা চিনির দাম প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় প্রতি কেজি চিনির দাম ৬-৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ আদেশ, স্লিপ ও প্রস্তুত- এ তিন ধরনের পদ্ধতিতে চিনি বেচাকেনা হয় খাতুনগঞ্জে। গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের পর থেকে পরিবহন সংকটের কারণে দেশের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। পরবর্তী সময়ে কারফিউ জারির পর কমে যায় চাহিদাও। তবে দেওয়া তথ্যমতে মঙ্গলবার থেকে কারফিউ শিথিলের সময় বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মিল থেকে সংগৃহীত চিনির দাম একদিনের ব্যবধানে বেশি বেড়েছে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, গত কয়েক দিনে সাধারণ ছুটি ও কারফিউর কারণে পরিবহন সংকট বেড়ে গেছে। তবে মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ চিনির চাহিদা বেড়েছে। গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় চিনির চাহিদাও বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স মামুন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী গৌতম রায় কালবেলাকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। টানা কয়েক দিন সরবরাহ না থাকায় আবার কখন সরবরাহ শুরু হতে পারে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আব্দুল রাজ্জাক কালবেলাকে বলেন, রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকলেও গতকাল থেকে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার ক্রয়প্রবণতায় ফিরেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক চালুর আশায় পণ্যের বুকিং দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিনের জমে থাকা পণ্য উত্তোলন শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচসহ বেড়েছে দামও। চাহিদার ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নিত্যপণ্য হিসেবে ভোজ্যতেলের বাজার কিছুটা বাড়তি থাকতে পারে।
ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সুযোগ পেলেই আজগুবি সব অজুহাতেও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ায়, এখন তো বড় সুযোগ। পণ্য যেহেতু আগে থেকেই মজুদ রয়েছে সুতরাং দাম বাড়ার প্রশ্নই আসে না।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি সংকটময় হলেও নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ চেইন ঠিক রাখা উচিত। প্রয়োজনে পুলিশ ও আইনি সহায়তায় পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। পাশাপাশি মজুদ পণ্যের দাম যেন না বাড়ে সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
মন্তব্য করুন