চারদিকে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কারো কাপড় ভিজে গেছে রক্তে, কারো নিথর দেহ পড়ে আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে। আহত কিংবা নিহতের খবর পেয়ে একে একে ছুটে আসতে শুরু করেছেন স্বজনরা। এরপর বিলাপ যেন আর থামেনি। চমেকের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে আহাজারিতে।
চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর এমনটাই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চমেকে আহত অবস্থায় অন্তত ৩০ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ঘটনা নিহত হয়েছেন তিনজন। নিহতরা হলেন ওয়াসিম আকরাম, মো. ফারুক, ফিরোজ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা সংঘর্ষের পর চমেক হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পুলিশ সদস্য। দুপক্ষে সংঘর্ষে আহতদের ভ্যানগাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, সিএনজি করে হাসপাতালে আনা হয়। এসময় আহত-নিহতদের বন্ধু, পরিবার, স্বজনরা চমেক হাসপাতালে ভিড় জমান। তাদের বিলাপে ভারী হয়ে ওঠে চমেকের পরিবেশ। অনেকেই কান্নায় লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।
নিহত ফারুকের স্বজনরা কালবেলাকে জানান, নগরের শুলকবহরের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন ফারুক। দুপুরে তিনি বাসায় ভাত খেতে এসেছিলেন। ফেরার পথে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়েন তিনি। এ সময় ফারুক গুলিবিদ্ধ হন। ফারুকে সংসারে ৭ বছরে এক কন্যা শিশু ও ১২ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে।
ফারুকের বাবা মো. দুলাল কালবেলাকে বলেন, ফারুক দুপুরে ভাত খেয়ে দোকানে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে। কে বা কারা তাকে গুলি করেছে তা আমরা জানতে পারিনি। আমার ছেলেকে কে এনে দেবে।
নিহতদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ওয়াসিমের বন্ধু মোর্শেদ কান্না বিজরিত কণ্ঠে কালবেলাকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমরা কৌটাবিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছি। আজকে ফারুকের আহত হওয়ার খবর পেয়ে আমরা ছুটে এসেছি। এসে দেখি আমার বন্ধুটা আর নাই, তাকে পাব কোথায়?
এর আগে চট্টগ্রামের ষোলশহর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় অনেকের হাতে লাঠিসোঁটার পাশাপাশি অস্ত্র দেখা গেছে। দুপক্ষে সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
মন্তব্য করুন