বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু থেকে মাত্র ২০ মিনিটেই চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে পৌছাঁনোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বলা হচ্ছে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ ফুরাবে মাত্র ২০ মিনিটে। কিন্তু প্রায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরেই এখন দানা বেধেছে অস্বস্তি। সবশেষ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগের পর অসঙ্গতির খোঁজে মাঠে নেমেছে তদন্ত কমিটি।
চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে একটি উপ-কমিটিও গঠন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য পারভীন জামান। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরের দিকে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে পরিদর্শন শুরু করে কমিটি। পরে তারা লালখান বাজার মোড়ে এসে পরিদর্শন শেষ করেন।
পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এবং কমিটির আহ্বায়ক এম এ লতিফ বলেন, আমরা পতেঙ্গা অংশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখেছি। এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুপাশের সীমানা দেয়ালে যে ক্লাম লাগানো হয়েছে সেগুলো মানসম্মত নয়। ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। দুয়েক জায়গায় রডও বেরিয়ে আছে। এসব অসঙ্গতি প্রকল্প পরিচালক ও কনসালটেন্টকে দেখিয়েছি। কিছু ফাটল এখানে (লালখান বাজার অংশের পিলারে) দেখেছি। ছবি তুলে নিয়েছি। আমরা বিশেষজ্ঞ না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করব।
তিনি বলেন, আমাদের তিন মাস সময় আছে। নির্মাণ কাজে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা সব দেখে প্রতিবেদন দেব। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এতে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না। এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হলেও র্যাম্পের কাজ না হওয়ায় এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিলেও জনগণ এখন সুফল পাবে না।
নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র্যাঙ্কিন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেসব ত্রুটি সামনে এসেছে তা অল্প সময়ের মধ্যে সংশোধনযোগ্য বলে মনে করছেন সিডিএ সংশ্লিষ্টরা। সিডিএ'র প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এখানে যা আছে তা ফাটল নয়, এয়ার ক্র্যাক। এ ধরনের স্ট্রাকচারে এরকম ক্র্যাক থাকে। তারপরও এখানে গাড়ি তুলে যাচাই করা হয়েছে, কোনো ফাটল নেই। ফিনিশিংয়ে কিছু ছোটখাট বিষয় আছে। সেগুলো আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। এগুলো অল্প সময়ে সংশোধনযোগ্য।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং- চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে টাইগারপাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে। এরইমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হলে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন