বির্তকিতকাণ্ডে আবারও ভাইরাল চট্টগ্রামের সেই আলোচিত বাশঁখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার তিনি বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরকে মেরে ‘হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এমন হুমকির অডিও ভয়েস রেকর্ডটি কালবেলার হাতে এসেছে। ওই এমপি মোস্তাফিজের ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটি ভাইরাল হলে চট্টগ্রাম জেলা-উপজেলায় আবারও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে এমন হুমকি দিলেও কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়।
সাবেক এই এমপি মোস্তাফিজুর রহমান বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। একইদিনে তিনি বাঁশখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামীকেও মোবাইল ফোনে মারার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গফুরের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডে মোস্তাফিজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো কী বলেছিস। আমি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি? গফুর তখন বলেন, আমি বলি নাই, চেয়ারম্যানরা তো তাই বলছেন। তখনই অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে মোস্তাফিজ বলেন, আমি ঢাকা থেকে আসি তোরে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিব।
গত ২৯ জুন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আব্দুল গফুর। সেখানে তিনি সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। তখন বক্তব্যে আব্দুল গফুর বলেছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি (সাবেক এমপি মোস্তাফিজ) মিথ্যা বলেছেন। নেত্রীকে তিনি নিজের ঘর না করে ব্যক্তিগত টাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় করেছেন বলেছেন। অথচ এ কার্যালয় করতে গালিব, জসিম, মাহাবুব, বদরুল টাকা দিয়েছেন।’
গফুরের এমন বক্তব্য শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তাফিজ মারার হুমকি দিয়েছেন। এর আগে গত ২৩ জুন দলীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় আব্দুল গফুরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
সাবেক এমপি মোস্তাফিজ হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাঁশখালী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর কালবেলাকে বলেন, এই ঘটনার জেনে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হবে। যেহেতু দলের একটা পদে আছি, তাই সাংগঠনিকভাবে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। এরপর সাংগঠনিকভাবে ঊর্ধ্বতন নেতারা সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানান তিনি। তবে বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তা ছাড়া আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা এবং সাবেক এমপি হয়েও এমন অশ্লীল গালাগালি করায় পুরো উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক এমপির এমন হুমকিতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক এমপি মোস্তাফিজের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য নানা সমালোচনায় উঠেছে। দলের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেসহ সব বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য বা হুমকি দিয়ে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এসব বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে বাঁশখালীর প্রভাবশালী এই দুই আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারীরা একে অন্যকে ছুড়ছেন পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সভা, অনুষ্ঠান এমনকি ফেসবুকেও একে অন্যের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এ নিয়ে চরম চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে তৃণমূলে।
এর আগে বাঁশখালীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চুরি করে এমপি (বর্তমান এমপি মুজিবুর রহমান) হয়েছেন ভালো কথা। সোজা সোজা এমপিগিরি করেন। না হলে কীভাবে শায়েস্তা সেটা আমার জানা আছে। নৌকাকে আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে। সেদিন আমি হুকুম দিলে আমার ভাইয়েরা সারা বাঁশখালী অচল করে দিত। কিন্তু সেটা আমি হতে দেয়নি, চুপচাপ শহরে চলে গিয়েছিলাম।
এরপর বাঁশখালীর ওসিকে (ওসি তোফায়েল) ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমি হুকুম দিলে ওসি তোফায়েলকে জনগণ ধরে পিটাইতো। আমি নীরব ছিলাম। এখন তারা কি হয় দেখেন।’
এরপরই এমপি মুজিবুর রহমান একটি সভায় গিয়ে পাল্টা উত্তরে বলেন, ‘আমার ভদ্রটাকে দুর্বলতা ভাববেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে কোথায় কী উন্নয়ন হয়েছে, সেটার হিসাব মেলাতে শুরু করতে হবে। বাঁশখালী থেকে দক্ষিণের পেকুয়া, চকরিয়া ৫০ বছর এগিয়ে, উত্তরে আনোয়ারা মেগাসিটি হয়েছে। বাঁশখালীতে ফুটপাতে রয়ে গেছি আমরা। আসুন একে অন্যের সাথে মিলে মিশে বাঁশখালীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। না হয় এর প্রতিরোধে আমি একাই লড়ব, সাধারণ জনগণ আমার সাথে আছে।’
এর আগেও দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে গালগাল, অস্ত্র হাতে মিছিল, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যসহ নানা কাণ্ডে আলোচনায় আসেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ব্যাপক আলোচিত। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ চলাকালে বাঁশখালী ওসিকে হুমকি দিচ্ছিলেন সাবেক এমপি মোস্তাফিজের এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট আগে মোস্তাফিজের প্রার্থিতা বাতিল হয়। তারও আগে নির্বাচনী মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মোস্তাফিজ ভাইরাল হয়েছিলেন সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগে। আর ভোটের প্রচার-প্রচারণা চলাকালে পুলিশের হাত কেটে ফেলার একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে সাবেক এই সংসদ সদস্যকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
মন্তব্য করুন