কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। জেলা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে বেশকিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে; যার উত্তর মিলছে না। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিহত ট্রলার মালিক শামসুল আলম ওরফে শামসু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হবে। তাদের রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হবে। গ্রেপ্তার দুজনই মামলার এজাহারভুক্ত।
এখনো পর্যন্ত এ ঘটনার কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেছে। মামলার স্বার্থে নিহতদের স্বজন, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত রোববার গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন সাগরে ভাসমান থাকা একটি ট্রলার নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসা হয়। পরে ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার ছনখোলাপাড়ার শামসুল আলম। নিহতদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন।
কক্সবাজার জেলার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, উদ্ধার হওয়া ট্রলারটির গায়ে কোনো নাম ছিল না। ট্রলারটি সমিতির আওতাভুক্তও নয়। যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা প্রকৃত জেলে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের ঘটনার আগে সাগর থেকে ফিরে আসা ছয় জেলের দেওয়া তথ্যমতে, শামসু মাঝির ট্রলারে করে ৭ এপ্রিল সাগরে যান ১৯ মাঝি-মাল্লা। গভীর সাগরে ৯ এপ্রিল ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে মাতারবাড়ী এলাকার বাইট্টা কামাল, নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার এবং তাদের সঙ্গে থাকা মাতারবাড়ীর আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির ট্রলারসহ আরও ৪-৫টি ফিশিং ট্রলার শামসু মাঝির ট্রলার ধাওয়া করে। এ সময় ট্রলারটির মাঝি-মাল্লাদের হিমঘরে আটকে সেটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়। নিহতদের স্বজনদেরও এ তথ্য দিয়েছিলেন ওই ছয় জেলে।
নিহতদের পরিবার যা বলছে
সোমবার ছেলে ওসমান গণির (১৭) লাশ নিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন জহুরা বেগম। মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামে তাদের বাড়ি।
তিনি বলেন, ‘সে (ওসমান) কক্সবাজার শহরের দোকানে চাকরি করত। পরে মহেশখালীতে গিয়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করত। ৭ এপ্রিল স্থানীয় নুরুল কবির নামের এক ব্যক্তি ওসমানকে ট্রলারে তুলে সাগরে নিয়ে যায়। কেন নিয়ে গেল বুঝে আসছে না।’ জহুরার দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
একইভাবে মঙ্গলবার চকরিয়ার কোনাখালী থেকে মর্গে এসেছেন জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। ট্রলার থেকে উদ্ধার ১০ লাশের মধ্যে তার ছেলে তারেক জিয়া (২৫) রয়েছে জানিয়ে জসিম বলেন, ছেলে কেন ট্রলারে গেল তিনি জানেন না। তারেক এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এক বন্ধুর কথায় তিনি স্টেশনে যাচ্ছেন বলে ঘর থেকে বের হয়। এরপর কয়েক দিন খবর নেই। রোববার বিকেলে খবর পেয়ে তিনি নাজিরারটেক উপকূলে গিয়ে লাশের সারিতে ছেলেকে শনাক্ত করেন।
এদিকে, ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে বাকি চারজনের লাশ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাদের পরিচয়। তবে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ চারজন হলেন- শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম।